দাঁতে ব্যথা হলে করণীয়। দাঁতে ব্যথার ওষুধ

 

দাঁতে ব্যথা হলে করণীয়। দাঁতে ব্যথার ওষুধ

মানবদেহের অসহ্যকর ব্যথাগুলোর তালিকা করলে দাঁতের ব্যথা প্রথমদিকে থাকবে। কারণ, মুখের মধ্যে দাঁত অবস্থিত। দাঁতে ব্যথা হলে মুখ দিয়ে খাবার খাওয়া, চিবানো অনেক কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি কথা বলতেও কষ্ট হয় অনেকের। তাই অসহনীয় দাঁতে ব্যথা হলে করণীয় কী, কী করলে দাঁতে ব্যথা থেকে আরাম পাওয়া যাবে, দাঁতে ব্যথা উপশমের ওষুধ কী - এসব জানা থাকলে সহজেই ব্যবস্থা নিয়ে ব্যথা দূর করা যায়।

দাঁতে ব্যথা হওয়ার কারণ 

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হলেও মানুষের করা ভুল কাজের সংখ্যা কম নয়। নিজেদের করা বিভিন্ন ভুলের কারণে নিজেদেরই ক্ষতি করে মানুষ। দাঁতে ব্যথা হওয়াতেও মানুষের কিছু কাজ জড়িত।

প্রতিটি জিনিসেরই আলাদা আলাদা যত্ন নেওয়ার ব্যবস্থা থাকে। ঠিকমতো যত্ন না নিলে জিনিসটি নাজুক হয়ে পড়তে থাকে, ময়লা ও জীবাণু জমতে থাকে। দাঁতের যত্ন হচ্ছে নিয়মিত সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ করা। নিয়মিত ব্রাশ না করলে প্রতি বেলার খাবারে খাওয়া খাদ্যের উচ্ছিষ্ট অংশ দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকে। তৈলাক্ত ও আঠালো খাবারের আবরণ পড়তে পড়তে ময়লা জমে যায়। তখন সেখানে ব্যাকটেরিয়া ও বিভিন্ন ক্ষতিকারক জীবাণু বাসা বাঁধে। তা থেকেই দাঁত আক্রান্ত হয়। ফলশ্রুতিতে হয় দাঁতে ব্যথা। 

খাবারের উচ্ছিষ্ট অংশ দাঁতের ফাঁকে আঁটকে থাকলে তা ধীরেধীরে পচন ধরে। সেই পচন ধরা খাবার থেকে মুখে ল্যাকটিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয় যা দাঁতের সুরক্ষার আবরণ "এনামেল"-কে নষ্ট করে দিতে শুরু করে। এনামেল নষ্ট হয়ে গিয়ে দাঁত তার স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলে। যার কারণে ক্যাভিটি, দাঁত ক্ষয়, দাঁতে ব্যথা হওয়ার মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়।

নিয়মিত ব্রাশ না করা, ঠাণ্ডা পানি, ঠাণ্ডা খাবার, মিষ্টি ও আঠালো খাবার - এই কারণগুলোই মূলত দাঁতে ব্যথা হওয়ার পেছনে দায়ী। খাদ্য তালিকায় ভিটামিন-বি,  আয়রন, ক্যালসিয়াম না থাকলে তা দাঁতের গঠন ও বিকাশে সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে। আমরা জানি আয়রন ও ক্যালসিয়াম দাঁতের সুরক্ষায় কতটা উপকারী।  

 পাইলস দূর করার কার্যকর ঘরোয়া উপায় 

 আবার কারও কারও বিভিন্ন ডেন্টাল কন্ডিশনের ( যেমন- দাঁত ফিলিং করানো) কারণেও উপসর্গ হিসেবে ব্যথা হয়ে থাকে।

দাঁতে ব্যথা হলে করণীয় 

ঘরোয়া কিছু পদ্ধতিতে দাঁতের অসহনীয় ব্যথাও সারিয়ে তোলা যায়। মৃদু থেকে তীব্র পর্যায়ের ব্যথাও ঘরোয়া সেই উপায় প্রয়োগ করে দূর করা সম্ভব। 

সেই ঘরোয়া কিছু কার্যকর উপায়সমূহ হলো:

লবণ

খুবই প্রচলিত পদ্ধতি হচ্ছে দাঁতে ব্যথা হলে ব্যথা করা দাঁতের গোড়ায় লবণ লাগিয়ে রাখা। এই পদ্ধতি প্রয়োগে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যেকোনো মাত্রার দাঁতে ব্যথা দূর হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা মতামত দেয়।

যে দাঁতের কাছে ব্যথা হচ্ছে সেই দাঁতের ফাঁকে একটু লবণ চেপে লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। দেখবেন ব্যথা কমে এসেছে। লবণে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী উপাদান রয়েছে, তাই ব্যাকটেরিয়ার কারণে হওয়া দাঁতের ব্যথা উপশমে লবণ কার্যকর।

শুধু লবণ লাগিয়েই ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এছাড়াও লবণের সাথে গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে তা আক্রান্ত দাঁতের গোড়ায় লাগাতে পারেন। অথবা কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে সেই পানি মুখে ভরে কুলকুচি করলেও আরাম পাওয়া যাবে।

লবঙ্গ

এলাচি জীবাণু প্রতিরোধী উপাদান থাকা একটি মশলা। যেই দাঁতে ব্যথা হয় সেখানে এলাচি চিবিয়ে চেপে ধরে রাখুন। তারপর আবার চিবান। চিবিয়ে আবার ব্যথার জায়গায় চেপে ধরুন। দেখবেন আরাম পাচ্ছেন।

আদা

এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা উপাদান রয়েছে আদায়। ফলে আদা সর্দিকাশি, ব্যথা উপশমে দারুণ কার্যকরী। আদা কুচি মুখে নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে ব্যথার জায়গায় চেপে ধরুন। কিছুক্ষণ চিবাতে থাকলেই ব্যথা দূর হয়ে যাবে।

রসুন

এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণসম্পন্ন রসুন। তাই ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে এর কার্যকারিতাও দারুণ। কাঁচা রসুন চিবিয়ে ব্যথার জায়গার চেপে ধরে রাখতে হবে। কাঁচা রসুন খেতে সমস্যা হলে তাতে কিছুটা লবণও মিশিয়ে নিতে পারেন।

পেয়ারা পাতা 

মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে পেয়ারা পাতার ব্যবহার বেশি দেখা যায়। কিন্তু দাঁতের ব্যথা নিরাময়েও যে পেয়ারা পাতা ভালো কাজ করে তা কি জানেন?

কয়েকটি পেয়ারা পাতা পানি দিয়ে ধুয়ে তা মুখে নিয়ে চিবান। চিবিয়ে পাতার রস ও ছোবড়া আক্রান্ত দাঁতের গোড়ায় চেপে ধরে রাখুন কিছুক্ষণ। দেখবেন অল্প সময়ের মধ্যে ব্যথা লাঘব হবে।  

বেকিং পাউডার 

এক চামচ বেকিং পাউডার আধা চামচ পানিতে গুলে নিন। তারপর সেটা দিয়ে কুলকুচি করুন কয়েকবার করে।

দূর্বাঘাস 

একমুঠো দূর্বাঘাস নিন। অবশ্যই তা ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। নিয়ে তা চিবাতে থাকুন। ক্লোরোফিল ও প্রদাহ প্রতিরোধী উপাদান থাকায় দ্রুত ব্যথা কমাতে দূর্বাঘাস কার্যকর। 

ভ্যানিলার নির্যাস

এতে রয়েছে অ্যালকোহল ও এন্টিঅক্সিডেন্ট যা ব্যথা দূরীকরণে যথেষ্ট কার্যকর। আঙুলের মাথায় একটু ভ্যানিলার নির্যাস নিয়ে তা আক্রান্ত দাঁতের গোড়ায় প্রয়োগ করুন দিনে ৩-৪ বার। 

 কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো জেনে নিন

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মিশ্রণ 

ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করতে এটি অতি কার্যকর। 

একটি গ্লাসে পানি ও হাইড্রোজেন পার অক্সাইড সমান পরিমাণে নিয়ে নেড়ে মিশ্রণ তৈরি করে নিন। তারপর সেই মিশ্রণ দিয়ে কয়েকবার কুলকুচি করে কুলি করুন।

বরফ চেপে রাখা

কাপড়ে বরফ পেঁচিয়ে নিয়ে তা যেই পাশে ব্যথা হচ্ছে সেই পাশের গালে ধরে রাখুন। বরফের কারণে ব্যথা কম অনুভূত হয়। কিন্তু দাঁতে ব্যথা নিয়ে কখনোই বরফ বা অতি ঠাণ্ডা কিছু খাওয়া যাবে না।

এই করণীয়গুলো ঠিকমতো মেনে প্রয়োগ করলেই দাঁতের ব্যথা উপশম করা সম্ভব।  

দাঁতে ব্যথা প্রতিকারে করণীয় 

ব্যথায় ভুগতে না চাইলে যেসব কারণে দাঁতে ব্যথা হয় সেই কারণগুলো অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।  উপরে দাঁতে ব্যথা হওয়ার যে কারণগুলো বলা হয়েছে সেগুলো পরিহার করতে পারলেই দাঁতের ব্যথা প্রতিকার করা যাবে।

যেগুলো করতে হবে -

- নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে একবার এবং রাতের খাবারের পর একবার করে দুইবার ব্রাশ করলে বেশি ভালো।

- আগে থেকে দাঁতের কোনো সমস্যার শিকার হয়ে থাকলে  ফ্রিজের অতিরিক্ত ঠাণ্ডা খাবার, লজেন্স, ক্যান্ডি, মিষ্টি ও আঠালো খাবার, রুটি, খেজুর ও কিসমিসের মতো শুকনা ফল এড়িয়ে চলাই ভালো।

- দাঁতের ফাঁকে ও গোড়ায় খাবার আঁটকে গেলে তা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করে নিতে হবে।

- ভিটামিন-বি, আয়রন ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।

- অনেকেই দাঁতের ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পেতে তামাক ব্যবহার করে দাঁতে। দাঁতে গুল দেয়। এতে সাময়িক পরিত্রাণ পাওয়া গেলেও এর কারণে পরবর্তীতে দাঁতের সমস্যা বাড়ার সম্ভাবণা থাকে। তাই তামাক ব্যবহার না করাই ভালো।

- ৪৮ ঘণ্টার বেশি দাঁতে ব্যথা থাকলে, সাথে জ্বর থাকলে ডেন্টাল বিভাগের ডাক্তারকে দেখিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে হবে। 

দাঁতে ব্যথার ওষুধ 

ব্যথানিবারণকারী ট্যাবলেট খাওয়ার মাধ্যমেও ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কার্যকর ব্যথানিবারণকারী ওষুধের মধ্যে এসপিরিন বেশি প্রচলিত। অসহ্যকর ব্যথা হলে এই জাতীয় ওষুধ খেলে ব্যথা দূর করা যায়। তবে এসব ওষুধ অধিকমাত্রায় গ্রহণ করা উচিত নয়। অবশ্যই অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে। 

শেষকথা, 

দাঁতে ব্যথা যে কারোরই হতে পারে যেকোনো বয়সে। তাই ব্যথা হলে ঘাবড়ে না গিয়ে উপরে বলা করণীয়গুলো মেনে চললেই ঘরোয়াভাবে ব্যথা দূর করা যাবে। অবস্থা বেশি খারাপ হলে দন্ত্যচিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম