ব্লাকহেডস দূর করার ঘরোয়া উপায়

 

ব্লাকহেডস দূর করার ঘরোয়া উপায়

ব্লাক হেডস মুখমণ্ডলে ব্রণের সমস্যার পেছনে সবচেয়ে দায়ী সাধারণ এক কারণ। যে কারও ত্বকে এটা হতে পারে। তবে যাদের ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত, তাদের ত্বকে ব্লাক হেডসের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ব্লাক হেডস এক বিরক্তিকর সমস্যা। এর জন্য বাইরে বের হওয়া নিয়ে অনেক ভুক্তভোগীরাই হীনমন্যতায় ভূগে থাকে। কেউ ভারী মেকআপ ব্যবহার করে এই সমস্যাটি লুকিয়ে রাখে, কেউ বা অনেক টাকা খরচ করে বিভিন্ন উপায়ে ব্লাক হেডস দূর করার জন্য। কিন্তু অনেকেই আশানুরূপ ফলাফল পান না। চিন্তা নেই! আপনার হাতের কাছে এমনকিছু জিনিস রয়েছে যা হয়ে উঠবে কার্যকরভাবে ব্লাক হেডস দূর করার উপায়।

চলুন, জানা যাক সেরা কিছু ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে যা আপনাকে এই বিব্রতকর সমস্যা থেকে মুক্তি দিবে।

ব্লাক হেডস কেন হয়?

“সেবাসিয়াস” নামক গ্রন্থি থেকে মৃত কোষ এবং অতিরিক্ত তেল (সেবাম) এর সংমিশ্রণে যখন ত্বকের লোমকূপ বা ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যায় তখন ব্লাক হেডস তৈরি হয়। আবার স্যালিসিলিক অ্যাসিড রয়েছে এমন অনেক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহারেও ব্লাক হেডস হয়ে থাকে। 

ভারী মেকআপ দীর্ঘক্ষণ লাগিয়ে রাখার ফলে লোমকূপ বন্ধ হয়েও এগুলোর সৃষ্টি হয়। যাদের ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত, তাদেরও এই সমস্যা দেখা দেয়। ব্লাক হেডস মূলত নাকের ডগায়, নাকের দুইপাশে, থুতনিতে, ঠোঁটের নিচে হয়, যা দেখতে ছোট চালের টুকরোর মতো। কারও কারও কানের লতি, পিঠ,  কনুইয়েও হয়।

হাত দিয়ে নখের মাধ্যমে খুঁটিয়ে অনেকেই এই মৃত কোষ চামড়া থেকে তুলে ফেলে। কিন্তু তাতে নখের আঘাতে ও নখে থাকা জীবাণুর কারণে ত্বকের অন্য কোনো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সাধারণ কিছু উপায় ব্যবহার করে সহজেই এ থেকে মুক্তি পান।

এখানে সেরকমই কিছু কার্যকর সহজ উপায় নিয়ে আলোচনা করা হবে, যা প্রয়োগ করলে অল্পদিনের মধ্যেই আপনি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

কার্যকরভাবে ব্লাক হেডস দূর করার উপায়

১) দারুচিনি

হাফ চা চামচ দারুচিনি গুড়া, এক চামচ ময়দা, খানিকটা পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। শুষ্ক ত্বক হলে মধু মিশাতে পারেন পানি কমিয়ে। ঘন পেস্ট তৈরি করে পরিষ্কার মুখে লাগান। ১০ মিনিট পর্যন্ত রেখে কিছুক্ষণ মাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটা ব্যবহার করার সময় মুখে কিছুটা জ্বলতে পারে। তবে তাতে কোনো সমস্যা হবে না। 

২) লেবুর রস

এক চা চামচ লেবুর রস আর এক চা চামচ মধু মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখতে পারেন। তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। 

৩) ডিমের সাদা অংশ

যারা ঘরোয়া উপায়ে খুব সহজে ব্লাক হেডসের সমাধান খুঁজছেন, তাদের জন্য সেরা উপায় হচ্ছে ডিমের সাদা অংশের মাস্ক। এর জন্য একটি ডিম নিয়ে কুসুম থেকে সাদা অংশটা আলাদা করুন, সাদা অংশটা ভালো মতন চামচ দিয়ে ছাড়িয়ে নিন । তারপর মুখের যেসব জায়গায় ব্লাক হেডস রয়েছে, সেখানে আলতোভাবে মেখে নিন। কিছু ফেসিয়াল টিস্যু পেপার টুকরা করে নিন। এরপর মুখ ভেজা ভেজা অবস্থায় টিস্যু পেপার গুলো ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন বাতাসে। ভেজা মুখ শুকিয়ে আসা না পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। একবারে শুকিয়ে গেলে আস্তে আস্তে টিস্যু পেপার গুলো তুলে ফেলুন। 

৪) বেকিং সোডা

এক চা চামচ বেকিং সোডা ও ২ চামচ পানি মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে ব্লাক হেডস-এর জায়গায় লাগিয়ে নিন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে তারপরে পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। 

৫) চালের গুড়া, গোলাপজল, লেবুর রস

এক চা চামচ চালের গুড়া, এক চা চামচ গোলাপজল , এক চা চামচ লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগান। দশ মিনিট পর আলতো করে ম্যাসাজ করুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। 

৬) মধু

একটি ডিমের সাদা অংশ নিন, তাতে এক চামচ মধু মিশিয়ে মুখে লাগান। সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। 

কালচে ঠোঁট গোলাপি করার প্রাকৃতিক উপায়

৭) নোস পোরস স্ট্রিপস

নানারকম ব্যস্ততার কারণে অনেকেই ঘরোয়াভাবে ত্বকের যত্ন নিতে পারে না, তখন রেডিমেড প্রোডাক্ট ব্যবহার করে থাকে । এই অবস্থায় নোস পোরস স্ট্রিপস হতে পারে আপনার এখন থেকে রেগুলার ব্লাক হেডস-এর সঙ্গী। এই নোস পোর স্ট্রিপস ব্যবহারের নিয়মও খুবই সহজ। মার্কেটে নানা ব্র্যান্ডের নোস পোর স্ট্রিপস পাওয়া যায়। ভালো মানের নোস পোরস স্ট্রিপস ব্যবহার করলে ব্লাক হেডস কমে যাবে।

৮) গ্রিন টি 

এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ভেজা গ্রিন টি পাতার সাহায্যে আপনার ত্বকে তেল উৎপাদন কমানো যাবে। যেহেতু তৈলাক্ত ত্বকে ব্লাক হেডসে সম্ভাবণা বেশি, তাই ত্বকের তেল কমিয়ে আনা খুব ভালো একটি উপায়। গ্রিন টি’র বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে। এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল হিসাবে কাজ করে যা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ক্ষতিকর কণার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। 

শুকনো গ্রিন টি পাতা নিন এবং পানির সাথে তা মিশিয়ে নিন। পরে আপনার ত্বকে ভেজা পাতা ম্যাসাজ করুন। আলতোভাবে কমপক্ষে ৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত ব্লাক হেডস হওয়া জায়গায় ম্যাসেজ করুন। তারপর পানি দিয়ে আপনার মুখ ধুয়ে ফেলুন।

৯) লবণ বা চিনির স্ক্রাব

লবণ বা চিনির স্ক্রাব ব্যবহার করে আপনার ত্বকের মৃত কোষ সরিয়ে ফেলুন। প্রথমে যেকোনো ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। আক্রান্ত স্থানে লবণ বা চিনি লাগান। তারপর সেখানে প্রায় ৩০ সেকেন্ডের মতো ত্বকে ম্যাসাজ করুন। পরে আপনার মুখ পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এই উপায়ে ব্লাক হেডস অনেকটাই দূর হয়ে যায়।

১০) স্যালিসিলিক অ্যাসিড

ব্লাক হেডস দূর করার জন্য স্যালিসিলিক অ্যাসিড যুক্ত কসমেটিকস সামগ্রী ব্যবহার করলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। এই অ্যাসিড যুক্ত অনেক ক্লিনজার বা লোশন বাজারে পাওয়া যায়। এটি ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের উপরের মৃত কোষের স্তর অপসারণ করতে সাহায্য করে। স্যালিসিলিক অ্যাসিড ত্বকের মৃত  কোষগুলোকে সরিয়ে দেয় ফলে তা লোমকূপের মুখে জমাট বাঁধে না। 

দোকানে বিভিন্ন রকমের  ক্লিনজার বা লোশন পাওয়া যায় যেগুলোতে স্যালিসিলিক অ্যাসিড বিদ্যমান। কিন্তু আপনার ত্বকের জন্য কোনটি উপযোগী তা যাচাই করেই সঠিক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিনুন।

আর যে কাজগুলো করলে ব্লাক হেডস মুক্ত থাকা যাবে, সেগুলো হলো-

অ্যালকোহল মুক্ত স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। মেকআপ সামগ্রী কেনার আগে প্যাকেট বা বক্সের গায়ে ভালোভাবে দেখে নিন সেটা কী কী উপাদান দিয়ে তৈরি।

ঘুম থেকে ওঠার পরে, ঘুমাতে যাওয়ার আগে এবং ব্যায়াম করার পরে আপনার মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন।

তৈলাক্ত চুলে নিয়মিত শ্যাম্পু করুন। তৈলাক্ত চুলের কারণে বালিশে তেল লেগে থাকে, পরে তা মুখেও লেগে যায়। তাই তেলমুক্ত থাকতে মুখমণ্ডল ধোয়ার পাশাপাশি চুলও শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিবেন। এবং প্রায়ই বালিশের কভার পরিবর্তন করবেন।

রোদে বের হওয়ার আগে ত্বকে সানস্ক্রিন বা সানব্লক ব্যবহার করুন, যা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে আপনার ত্বককে সুরক্ষা দিবে।

বারবার আপনার মুখমণ্ডলে স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। অপরিষ্কার হাতে মুখে হাত দিলে তা থেকে জীবাণু ছড়াতে পারে। নখ দিয়ে খুঁটিয়ে ব্লাক হেডস তুলতে যাবেন না।

শেষকথা,

ব্লাক হেডস নিয়ে দুশিন্তা না করে, অযথা টাকা খরচ না করে উপরিউক্ত সহজ উপায়গুলো চেষ্টা করে দেখুন, ফলাফল নিজেই দেখতে পারবেন। কোনো মেকআপ সামগ্রী কেনার আগে আপনার ত্বকের ধরণ কেমন তা মাথায় রেখে সঠিক মানের সামগ্রী কিনুন। নিজে যাচাই করতে না পারলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম