জিমেইল একাউন্ট ডিজেবল হতে পারে। জেনে নিন কারণ

 

জিমেইল একাউন্ট ডিজেবল হতে পারে। জেনে নিন কারণ

সার্চ জায়ান্ট গুগলের যত যোগাযোগ মাধ্যম সার্ভিস রয়েছে, জিমেইল হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ও জনপ্রিয়। বিশ্বের অসংখ্য মানুষ দৈনন্দিন কাজের জন্য জিমেইল একাউন্ট ব্যবহার করে থাকে। মোবাইলে বা কম্পিউটারে অন্তত একটি জিমেইল একাউন্ট থাকা মানে গুগলের সকল সার্ভিস উপভোগের সুযোগ থাকা। কিন্তু যদি সেই জিমেইল একাউন্ট ডিজেবল হয়ে যায়, তখন কাজে যেমন ব্যাঘাত ঘটে, তেমনি নিজের মোবাইল বা কম্পিউটারও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার গুগলের নতুন আপডেট অনুযায়ী ২ বছরের বেশি সময় ধরে অচল অর্থাৎ অব্যবহৃত থাকা গুগল একাউন্ট ডিলিট করে দেওয়া হবে।

যেসব কারণে ডিজেবল ও ডিলিট হতে পারে আপনার জিমেইল একাউন্ট, সেসব কারণগুলো জেনে সেগুলো থেকে বিরত থাকলেই অতি প্রয়োজনীয় এই অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমটি নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যবহার করা যাবে।

জিমেইল একাউন্ট ডিজেবল  হওয়ার প্রভাব

অফিসিয়াল বিভিন্ন কাজ, ব্যক্তিগত কোনো কাজের অবস্থা ও অগ্রগতি সম্পর্কে অফিসে কিংবা নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে জানাতে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ইমেইল। ইমেইল ব্যবহার করার জন্য আপনার অবশ্যই একটি জিমেইল একাউন্ট থাকতে হবে। জিমেইল একাউন্ট ব্যতীত আপনি অনলাইনে কোনো কাজই করতে পারবেন না।

গুগল প্লেস্টোর থেকে কোনো অ্যাপ ইনস্টল করা, কোনো ব্রাউজারে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘুরে দেখা, ইমেইল আদান-প্রদান, ইউটিউবে ভিডিও দেখা, ইউটিউব চ্যানেল করা, ফেসবুক একাউন্ট খোলার মতো অনলাইনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো করতে হলে অবশ্যই জিমেইল একাউন্ট থাকতে হয়। 

অতি প্রয়োজনীয় এই একাউন্ট যদি হুট করেই নিজের অজান্তে ডিজেবল বা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, তাহলে আপনি অনলাইনের বেশিরভাগ কাজকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন। যার প্রভাব পড়বে আপনার ভার্চুয়াল জগতের উপর। তখন আপনি ডিজেবল একাউন্ট দিয়ে কোনো কাজই করতে পারবেন না। 

আপনার অজান্তেই এমন কোনো কাজ আপনি করেছেন যার কারণে গুগল আপনার একাউন্টটি ডিজেবল করে দিয়েছে।

কেন আপনার একাউন্ট ডিজেবল হলো তার নির্দিষ্ট ও সম্ভাব্য কিছু কারণ এখানে আলোচনা করা হয়েছে।

জিমেইল একাউন্ট ডিলিট হওয়ার কারণ 

সম্প্রতি গুগল জানিয়েছে যেসব জিমেইল একাউন্ট ২ বছর বা এর অধিক সময় ধরে ব্যবহার করা হয় না, সেই গুগল একাউন্টটি ডিলিট হওয়ার তালিকায় রাখা হবে। যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ডিলিট করার কার্যক্রম শুরু হবে।

একাউন্ট ডিলিট করার কারণ হিসেবে গুগল উল্লেখ করেছে, পুরাতন একাউন্ট গুলোর সিকিউরিটি ব্যবস্থা থাকে নড়বড়ে, পাসওয়ার্ড মনে থাকে না বেশিরভাগেরই। দূর্বল সিকিউরিটির জন্য সেই একাউন্ট গুলো হ্যাক হওয়া সহ অন্যান্য সমস্যার শিকার হতে পারে। সেই সমস্যা এড়াতেই গুগল একাউন্ট ডিলিট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 গুগল এডসেন্স পাওয়ার সহজ উপায় গুলো জানুন

কিন্তু কেউ চাইলেই তার একাউন্ট ডিলিট হওয়ার হাত থেকে মুক্ত রাখতে পারবে। কীভাবে গুগল একাউন্ট ডিলিট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করবেন তা এই আলোচনার নিচের দিকে বলা হয়েছে। তার আগে ডিজেবল হওয়ার কারণ জেনে নিন।

জিমেইল একাউন্ট ডিজেবল হওয়ার কারণ

প্রতিটি কোম্পানির নিজস্ব নিয়মকানুন থাকে। গুগল হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় সার্চ ইঞ্জিন। গুগল চালু হবার পর থেকেই এর জনপ্রিয়তা ও ব্যবহার ক্রমশ বেড়ে চলেছে। গুগলের সাথে প্রতিযোগিতা করতে আরও অনেক সার্চ ইঞ্জিন তৈরি হয়েছে। কিন্তু গুগলকে এখনও টেক্কা দিতে পারেনি কোনো সার্চ ইঞ্জিনই।

এত বড় সার্চ ইঞ্জিন, সারাবিশ্বেই যার ব্যবহার, অবশ্যই এর কিছু পলিসি ও নিয়মকানুন রয়েছে। গুগলের সেবা ভোগ করতে হলে অবশ্যই সেই নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। তা না হলে ডিজেবল হয়ে যেতে পারে গুগল একাউন্ট।

গুগলের সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী যেসব নিয়মকানুন না মানলে জিমেইল একাউন্ট ডিজেবল হয়ে যায় সেগুলো হলো -

১. নির্দিষ্ট বয়সসীমা 

১৮ বছর বয়স হতে হয় জিমেইল একাউন্ট করতে। যদিও কিছু কিছু দেশের আইন অনুযায়ী ১৬/১৭ বছর হলেও গুগল একাউন্ট ব্যবহারের উপযোগী বলে বিবেচিত হয়।

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী গুগলের নিয়ম হলো সর্বনিম্ন ১৮ বছর বয়স হতে হবে জিমেইল একাউন্ট ব্যবহার করতে। ১৮ বছর না হলে গুগল কাউকে একাউন্ট খোলার অনুমতি দিবে না। তবে কারও যদি খুব দরকারি কারণে একাউন্ট করার প্রয়োজন হয়, তাহলে পরিবারের প্রাপ্ত বয়স্ক কাউকে সেই একাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে। প্রয়োজনীয় প্রমাণ দেখানোর পর তবেই গুগল তাকে একাউন্ট করতে দিবে।

কিন্তু যদি কেউ প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেই একাউন্ট গুগল থেকে ডিজেবল করে দেওয়া হয়।

২. নিজের পরিচয় ব্যতীত অন্যের পরিচয়ে করা একাউন্ট 

কেউ যদি কারও কোনো প্রকার ক্ষতি করতে নিজের পরিচয় ও তথ্য না দিয়ে অন্যের পরিচয় দিয়ে একাউন্ট খুলে তার ক্ষতি করতে চেষ্টা করে, তাহলে গুগল সেই একাউন্টকে নিষ্ক্রিয় করে দিবে। নিজের পরিচয় সহ প্রয়োজনীয় প্রমাণ দেখাতে না পারলে সেই একাউন্টটি চিরতরে ডিজেবল করে দেওয়া হয়।

৩. আইন অমান্য করা কোনো কার্যকলাপ 

দেশের আইন অমান্য করে কোনো একাউন্ট থেকে কোনোরকম কার্যকলাপ চালানো হলে গুগল কর্তৃপক্ষ সেটাকে ডিজেবল করে দেয়।

৪. হুমকি ও হয়রানি বিষয়ক কার্যকলাপ 

গুগলে করা কোনো একাউন্ট থেকে যদি অনলাইনে কোথাও কাউকে হয়রানি করা ও হুমকি দেওয়ার কাজ করা হয়, তাহলে সেই একাউন্টকে গুগল পলিসি ভঙ্গকারী ভেবে ডিজেবল করে দেয়। 

৫. শিশু নিগ্রহকারী ও শিশু যৌনতা বিষয়ক কার্যক্রম 

গুগল শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সর্বদাই প্রস্তুত। অনলাইনে শিশুদেরকে নিরাপদ সেবা দিতে গুগল প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আপডেট এনে থাকে। ইন্টারনেটে কেউ যদি শিশুদের যৌন হয়রানি ও নিগ্রহকারী কোনো কাজ করে কিংবা উক্ত কাজ সংশ্লিষ্ট কোনো কার্যক্রমে জড়িত ( যেমন- চাইল্ড এবিউজিং, চাইল্ড পর্ণগ্রাফি বিষয়ক কিছু সার্চ করা) হয় তাহলে গুগল সেই জিমেইল একাউন্টটিকে ডিজেবল করে দেয়।

৬. অশ্লীলতা ও যৌনতা 

জিমেইল একাউন্ট ব্যবহার করে কেউ মুক্তভাবে কাউকে অশ্লীল ও যৌন আক্রমণ করলে, ইন্টারনেটে যৌনতা বিষয়ক কনটেন্ট প্রচার করলে সেই একাউন্টটিকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়।

৭. ম্যালওয়্যার, ফিশিং, স্প্যাম, স্ক্যাম 

এরকম কোনো ক্ষতিকারক কার্যক্রম কোনো একাউন্ট থেকে পাওয়া গেলে সেটাকে গুগল নিষ্ক্রিয় করে দিয়ে থাকে।

৮. সন্ত্রাসী কার্যকলাপ 

টেরোরিজম বা সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী কোনো কার্যক্রম কোনো জিমেইল একাউন্ট থেকে করা হলে সেই জিমেইল একাউন্টটি ডিজেবল হয়ে যায়। 

 ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে যে যোগ্যতা গুলো প্রয়োজন

৯. অটোমেটিক কল ও মেসেজ আদান-প্রদান 

গুগল একাউন্ট ব্যবহার করে গুগলের কোনো সার্ভিসের মাধ্যমে অটোমেটিক কল ও মেসেজ সুবিধা ব্যবহার করার কারণেও একাউন্ট ডিজেবল হতে পারে। কারণ অটোমেটিক কল ও সুবিধা robodialing / robocalls ফিচার যা কম্পিউটারে প্রোগ্রাম করে পূর্বে থেকে রেকর্ড করে রাখা হয় এবং তা একাধিক মানুষকে পাঠানো যায়। এর ফলে সম্ভাব্য কোনো ক্ষতি হতে পারে এমন কোনো ক্রিয়াকলাপ দেখা গেলে উক্ত কাজে সংশ্লিষ্ট একাউন্টকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।

১০. গুগলের অন্যান্য সার্ভিসের পলিসি ভঙ্গ করলে

গুগলের একাধিক সার্ভিস ও প্রোডাক্ট রয়েছে। প্রতিটিতে নির্দিষ্ট কিছু পলিসিও রয়েছে। কোনো জিমেইল একাউন্ট ব্যবহার করে যদি কেউ সেই পলিসি ভঙ্গ করার কোনো কাজ করে থাকে, তাহলে সেটি ডিজেবল হয়ে যেতে পারে। যেমন- ইউটিউবের আলাদা কিছু নিয়মকানুন আছে ভিডিও দেখা ও চ্যানেলে ভিডিও প্রচার করার ক্ষেত্রে। সেগুলো যদি মানা না হয়, তাহলে যেই একাউন্ট ব্যবহার করে ইউটিউব চালানো হবে সেটাকে ডিজেবল করা হবে।

কীভাবে গুগল একাউন্ট ডিলিট হওয়া থেকে মুক্ত রাখবেন?

আপনার পুরাতন গুগল একাউন্ট যদি ২ বছর এর বেশি সময় ধরে ব্যবহার করে না থাকেন অর্থাৎ সেই একাউন্ট দিয়ে কোনো কাজ করা না হয় তাহলে সেটাকে ডিলিটের তালিকায় ফেলবে গুগল। এমনটা করা হলে আপনি সেই একাউন্ট দিয়ে গুগলের কোনো কিছু ব্যবহার করতে পারবেন না। 

পুরাতন সেই একাউন্ট রক্ষা করতে আপনাকে মাঝেমধ্যে সেই একাউন্ট ব্যবহার করতে হবে।

যে কাজগুলো করতে হবে -

- সেটাতে ইমেইল পড়া, ইমেইল পাঠানো।

- সেটাতে লগ-ইন করে ইউটিউবে ভিডিও দেখা।

- গুগল ড্রাইভ, গুগল ফটোস ব্যবহার। 

- গুগল প্লেস্টোর থেকে  সেই একাউন্ট লগ-ইন করে কোনো অ্যাপ ইনস্টল করা। 

- কোনো ব্রাউজারে সেই একাউন্ট দিয়ে গুগলে সার্চ করা।

- অন্য কোনো প্লাটফর্ম বা থার্ড পার্টি অ্যাপ অথবা ওয়েবসাইটে যুক্ত হওয়ার জন্য সেই গুগল একাউন্ট দিয়ে সাইন-ইন করা।

এককথায় আপনার একাউন্টকে ডিলিট হওয়া থেকে বাঁচাতে সেই একাউন্টটি মাঝেমধ্যেই ব্যবহার করে গুগলের বিভিন্ন সার্ভিস নিতে হবে। এবং উন্নত সিকিউরিটির জন্য পুরাতন একাউন্টটিতে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে Two-factor Authentication সিস্টেম চালু রাখতে হবে। বাড়তি সতর্কতার জন্য সেটার সাথে অন্য একটি রিকোভারি একাউন্ট যুক্ত করতে পারেন।

ভয়ের কিছু নেই। গুগল হুট করেই আপনার একাউন্ট ডিলিট করবে না। ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত আপনাকে গুগল থেকে মাঝেমধ্যেই মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ইমেইল ও নোটিফিকেশন পাঠাবে। আপনি সেই সময়ের মধ্যে আপনার একাউন্টটি সচল রাখার কাজগুলো করলে ডিলিট হওয়ার হাত থেকে মুক্ত থাকবে একাউন্ট। 

শেষ কথা

আইন অমান্য করলে শাস্তির বিধান রয়েছে সর্বত্র। গুগলেও এর ব্যতিক্রম নয়। কেউ গুগলের আইনকানুন না মানলে শাস্তিস্বরূপ গুগল থেকে জিমেইল একাউন্ট ডিজেবল হওয়া সহ গুগলের বিভিন্ন সার্ভিস ব্যবহার করা থেকে বঞ্চিত করে দেওয়া হয়।

আবার যেকোনো দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকা অচল জিনিসটি আস্তে আস্তে একসময় বিলীন হয়ে যায়। গুগল একাউন্ট দীর্ঘদিন অচল থাকলেও এখন থেকে সেটা বিলীন অর্থাৎ ডিলিট করে দেওয়া হবে সতর্কতার অংশ হিসেবে। 

তাই নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ চালু রাখতে ও অনলাইনে বিভিন্ন সেবা উপভোগ করতে জিমেইল একাউন্ট সচল ও নিরাপদ রাখুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম