কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সহজ উপায়

 

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সহজ উপায়



পরিপাকতন্ত্রের যত ধরণের সমস্যা হয়ে থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য সেগুলোর মধ্যে খুব পরিচিত একটি। টয়লেট করতে গিয়ে অনেকক্ষণ বসে থাকা, পায়খানা বা মল শক্ত হওয়া, মলত্যাগ করার সময় পায়ুপথে জোরে বলপ্রয়োগ করা, মলত্যাগ করার পরও পেট ঠিকমতো পরিষ্কার না হওয়া - এই সমস্যাগুলোই কোষ্ঠকাঠিন্য। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে এটি পরিপাকতন্ত্র, পায়ুপথের বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করতে পারে। 

কীভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য সহজেই দূর করা যায় কোনো চিকিৎসা না নিয়েই, সে বিষয়েই আপনাদেরকে জানাবো।

কোষ্ঠকাঠিন্য কাকে বলে? 

মলত্যাগ করতে কষ্ট হওয়া, মল খুব শুকনা , মলের দলা স্বাভাবিকের তুলনায় বড় ও শক্ত, শক্ত মলের জন্য পায়ুপথে ব্যথা, মলত্যাগের সময় পেট পুরোপুরি পরিষ্কার না হওয়া, টয়লেটে বেশি সময় ধরে বসে পায়ুপথে অনবরত চাপ দিয়ে মল বের করার চেষ্টা করা, সপ্তাহে ৩ বারের কম পায়খানা হওয়ার মতো বিষয়গুলোকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। 

পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি মানুষই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে পরিপাকতন্ত্রের এই সমস্যায় পড়ে।  এর জন্য দায়ী মানুষের করা কিছু ভুল কাজ। সেই ভুল কাজগুলোর জন্যই কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো অস্বস্তিকর সমস্যার সৃষ্টি হয়। ঠিকমতো ব্যবস্থা না নিলে যা পরবর্তীতে একসময় আরও জটিল রোগও সৃষ্টি করতে পারে।

পেট ফাঁপা বা ফোলা, এনাল ফিসার, ফিস্টুলা, পাইলস, মলদ্বার পায়ুপথের বাহিরে চলে আসা, পায়ুপথ ফেটে রক্তপাত হওয়া, অন্ত্রের ভিতরে বাঁধা সৃষ্টি হওয়ার মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে। 

তাই সবার উচিত কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় পড়তে না চাইলে আগে থেকে সচেতন হয়ে সঠিকভাবে জীবনযাপন করা।

কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার কারণঃ

নিজেদের সাধারণ কিছু ভুল কাজের কারণেই বেশিরভাগ এই সমস্যাটি হয়ে থাকে। যেসব কারণ এই সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে, সেগুলো এখানে দেওয়া হলো।

- প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় পর্যাপ্ত ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার না থাকা।

- পর্যাপ্ত পানি পান না করার কারণে পানিশূন্যতা হওয়া।

- অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগানো।

- ধুমপান, চা-কফি ও মদপান করা।

- বেগ পেলেও পায়খানা করতে দেরি করা, চেপে রাখা।

- যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রম না করা। 

- কোলন অথবা মলদ্বারের কোনো সমস্যা। 

- অন্ত্রের যত্ন না নেওয়া।

- এন্টাসিড ও ব্যথানাশক বিভিন্ন মেডিসিন এর জন্য। 

এই কারণগুলোর জন্যই মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।

কাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা বেশি হয়?

যেকেউই এই সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে পারে জীবনে একবার হলেও। শিশু বয়সী থেকে বৃদ্ধ এর মধ্যে যেকোনো বয়সের যেকেউ কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে পারে। 

শিশুরা খাওয়ায় অনিয়ম করে থাকে বিধায় শিশুরা এতে ঘনঘন ভুগে। বেশিরভাগ গর্ভবতী নারীদের শেষ ৩ মাসে এটি হয়ে থাকে। আর বয়সজনিত সমস্যায় ৬০ এর অধিক বয়সী মানুষের মধ্যে এটি বেশি দেখা দেয়।

কীভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য সহজেই দূর করা যায়?

কোষ্ঠকাঠিন্য মারাত্মক কোনো সমস্যা নয়।

সাধারণ এই সমস্যাটি আপনি ঘরোয়াভাবেই সমাধান করতে পারবেন। 

এটি দূর করার জন্য যে কাজগুলো আপনাকে করতে হবে :

খাবারঃ

ফাইবার বা আঁশের খাদ্য উপাদান সমৃদ্ধ খাবারগুলো প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখতে হবে। পরিপাক ও খাবার হজমের কাজে ফাইবার খুব কার্যকর। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার পরিপাকতন্ত্রের ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে ফলে খাবার সহজে হজম হয়। আর খাবার ঠিকমতো হজম হলে পায়খানাও স্বাভাবিক হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূরে থাকে। 

জেনে নিন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সিরাপের নাম

বিভিন্ন পদের শাকসবজি, ডাল, শিম, পেঁপে, কলা, পেয়ারা, অ্যাভোকাডো, ইসবগুলের ভুসি এসকল খাবার থেকে আপনি সহজেই উচ্চমাত্রার ফাইবার পাবেন।

দুধ, ফাস্টফুড, গরুর মাংস এড়িয়ে চলতে হবে।

ব্যায়ামঃ

নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করলে পরিপাকতন্ত্রের কাজ স্বাভাবিক থাকে, অন্ত্র ঠিকমতো কাজ করতে পারে, খাবার ঠিকমতো হজম হয়। 

আপনার যদি পরিশ্রম করার মতো কাজ না থাকে, তাহলে একদম শুয়ে বসে না থেকে প্রতিদিন অন্তত ২৫ মিনিট ব্যায়াম করুন। কিছুক্ষণ হাঁটাহাটি করা, সাইকেল চালানো, সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করা, স্ট্রেচিং এই সহজ ব্যায়ামগুলোই করুন।

প্রতিদিন যদি সম্ভব না হয়, সপ্তাহে ৩ দিন হলেও ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।

বেশিক্ষণ ক্ষুধা রাখা যাবে নাঃ

অতিরিক্ত ক্ষুধা থাকলে পরিপাকতন্ত্র কাজ করার মতো কিছু পায় না। পরিপাকতন্ত্রের কাজই খাদ্য পরিপাক করা ও অন্ত্র ভালো রাখা। দীর্ঘ সময় ধরে খাবার না পেলে পাকস্থলী খালি হয়ে যায়। তখন মল উৎপন্ন হতে পারে না। ফলে মলত্যাগের ইচ্ছা জাগলেও ঠিকমতো মলত্যাগ হবে না। পাকস্থলী ও পরিপাকতন্ত্র যেন সবসময় স্বাভাবিকভাবেই কাজে লেগে থাকতে পারে, তার জন্য দিনে ৩-৪ বেলা খাবার খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে। 

ধুমপান, চা -কফি,অ্যালকোহল ত্যাগ করাঃ

ধুমপান, অ্যালকোহল শরীরে অধিক পানি শোষণ করে। ফলে শরীর থেকে দ্রুত পানি বের হয়ে যায় এবং পানিশূন্যতার সৃষ্টি করে। শরীরে পানির অভাব হলে পরিপাকতন্ত্রের ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। তাই বিড়ি সিগারেট, অতিরিক্ত চা-কফি পান করা ও অ্যালকোহল ত্যাগ করতে হবে।

পায়খানা চেপে না রাখাঃ

জোর করে পায়খানা চেপে রাখার কারণে দেহ পানিশূন্যতার কবলে পড়তে পারে। আর এজন্য হতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য। তাই যখন মলত্যাগের অনুভূতি জাগবে, দেরি না করে মলত্যাগ করতে হবে। 

পানি পানঃ

শরীরের সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে পানি অপরিহার্য। প্রতিদিন দেড় লিটার অথবা ৮-১২ গ্লাস পানি পান করা সবারই উচিত।

মেডিসিনের ব্যবহারঃ

এন্টাসিড জাতীয় মেডিসিন পরিপাকে অস্বাভাবিকতা তৈরি করে অনেকসময়। আর ব্যথানাশক মেডিসিন অন্ত্র ও কিডনির জন্য ক্ষতিকারক। তাই এই মেডিসিন ঘনঘন সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। 

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে থাকতে এই কাজগুলো করতে হবে। আর যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয়েছে, তাদেরও উপরের এই কাজগুলো করতে হবে সহজেই এটি দূর করার জন্য। 

যারা ইতিমধ্যে এতে ভুগছেন, তারা পাশাপাশি আরেকটি কাজ করবেন। সেটা হলো - যখন টয়লেটে যাবেন, তখন হাইকমোড ব্যবহার করা এড়িয়ে চলবেন। দুই পা ফাঁক করে বসা হয় এমন প্যান কমোডে বসবেন। এতে সুবিধা হলো, দুই পায়ে সম্পূর্ণ ভর করায় পায়ুতেও ভর পড়বে। তাতে মল স্বাভাবিকভাবে বেরিয়ে আসতে পারে।

সাবধানতাঃ

নিচে বর্ণিত এই অবস্থা গুলো দেখা দিলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। 

- সপ্তাহে ৩ বারের কম মলত্যাগ হলে

- মলত্যাগের সময় পায়ুপথ দিয়ে রক্ত পড়লে

- কোমর ও তলপেটে কয়েকদিন ধরে ব্যথা থাকলে

- হঠাৎ করে ওজন কমে যেতে থাকলে

- পেট ও পায়ুপথের কোনো সমস্যা থাকলে

যদি এরকম অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাহলে ডাক্তার দেখিয়ে সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া নিয়ে অনেকেই বিব্রত ও লজ্জিত থাকেন। যার কারণে সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিতে দেরি হয়ে যায়। দেরি করা মোটেও ঠিক হবে না। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার এই উপায়গুলো মেনে চললে সহজেই এটি দূর করা সম্ভব।  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম