বন্ধুরা আজকে আমরা মোটা হওয়ার সহজ উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি।
কথায় আছে স্বাস্থ্য সকল কিছুর মূল। অর্থাৎ আপনি যত দিক থেকেই এগিয়ে থাকেন না কেন আপনার স্বাস্থ্যগত দিকগুলো যদি ঠিক না থাকে তবে আপনি সুখী হতে পারবেন না।
আমরা অনেকেই চাই মোটা হতে কিন্তু কত ওষুধ, কত উপায় পালন করার পরেও যেন কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। আমরা অনেকের পরামর্শ অনুযায়ী অনেক ধরনের নিয়ম পালন করেও কোনো ফল পাইনা। ঘুরেফিরে সেই চিকন আর রোগা শরীর নিয়ে আমাদের কষ্টে ভুগতে হয়।
তবে এসব চিন্তা আজ থেকে বাদ দিয়ে দিন। আজকের এই আর্টিকেলে উল্লেখিত বিষয়গুলো এবং নিয়মগুলো যদি আপনি সুন্দর মত পালন করতে পারেন, তবে আমি কথা দিচ্ছি আপনাকে মোটা হওয়া নিয়ে আর সমস্যায় ভুগতে হবে না। তো অনেক কথা বলে ফেললাম শুরুতে চলুন মেইন পয়েন্টে আসা যাক।
মোটা হওয়ার সহজ উপায় | কিভাবে মোটা হওয়া যায়?
মোটা হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমত আপনাদের সাথে সকাল, দুপুর এবং রাতের খাদ্য রুটিন নিয়ে আলোচনা করবো। কারণ মোটা হওয়ার ক্ষেত্রে বা ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে খাবারের রুটিন একটি বড় ভূমিকা রাখে।
সকালের খাবার
কলাঃ কলা একটি বিভিন্ন পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফল। এটি আমাদের হজমে সাহায্য করার পাশাপাশি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, হার্ট রোগের ঝুঁকি কমানো ইত্যাদি সমস্যা থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে। মোটা হওয়ার ক্ষেত্রে এটি বেশ উপকারী, তাই প্রতিদিন সকালে নাস্তার সাথে একটি বা দুটি কলা খেতে পারেন।
ডিমঃ ডিম আমাদের বিভিন্ন পুষ্টি ঘাটতি দূর করে থেকে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি আপনাকে মোটা হওয়া বা ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে অনেকটা সাহায্য করবে। তবে অবশ্যই সেদ্ধ করে খাবেন।
দুধঃ দুধের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম যা আমাদের হাড় সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও একজন মানুষের শরীরে যে পরিমাণ পুষ্টিগুণ প্রয়োজন তার সবটা দুধের মাধ্যমে পাওয়া যায়। তাই সকলের নাস্তায় এক গ্লাস দুধ রাখবেন। এটি মোটা হওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করবে।
খেজুরঃ খেজুর ক্ষেত্রে প্রত্যেকে পছন্দ করেন। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি ওজন বাড়াতে ভীষণভাবে উপকারী। আর তাই আপনার সকালের নাস্তায় অবশ্যই খেজুর ফলকে জায়গা করে দিতে পারেন। এটি আপনার স্বাস্থ্য মোটা করতে বেশ উপকারী।
পানিঃ যদিও পানি খেলে আপনি মোটা হবেন এমনটা নয়। তবে অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন। এটি আপনার সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
উপরে উল্লেখিত খাবার গুলো আপনি প্রতিদিন না হলেও নিয়ম করে সকালের নাস্তায় খেতে পারেন। তবে সকাল ছাড়াও অন্য সময়ে আপনি এসব খাবার খেতে পারেন। যেহেতু এই খাবার গুলো সবজায়গায় সহজলভ্য তাই এগুলো খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাদের খুব একটা সমস্যায় পড়তে হবে না।
দুপুরের ও রাতের খাবার
ডালঃ বাঙালির ভাতের সাথে ডাল না হলে যেন চলে না। তবে আপনি হয়তো জানেন না ডাল এর প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে। এতে আছে প্রোটিন, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ইত্যাদি পুষ্টি। তাই দুপুরের বা রাতের খাদ্যতালিকায় ডাল রাখতে পারেন। এটি মোটা হতে বেশ সাহায্য করে।
টক দইঃ টক দই তে বিদ্যমান রয়েছে অনেক ধরনের উপকারী জীবাণু যা আপনার শরীরের বিভিন্ন উপকার সাধন করে থাকে। আর তাই মোটা হওয়া, ওজন বৃদ্ধি কিংবা শরীরের সুস্থতার ক্ষেত্রে দুপুরে বা রাতে খাবারের পর কিছুটা টক দই অবশ্যই খাবেন।
মুরগির মাংসঃ মুরগির মাংস আপনার দুপুরের বা রাতের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। খাসি বা গরুর মাংসে যেহেতু চর্বির মাত্রা লক্ষ করা যায় তাই এসব পরিমিত পরিমাণে খাওয়া শ্রেয়।
সাধারণত আমরা যে তিনবেলা খাবার খেয়ে থাকি তাতে আপনি কোন কোন খাবার গুলো বেশি প্রাধান্য দেবেন সেগুলো উপরে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তবে এই সময়ের বাহিরেও আমরা বিভিন্ন খাবার নাস্তা বা খুদা নিবারণের জন্য গ্রহণ করি। চলুন এমন কিছু খাবারের সম্পর্কে নিচে জেনে নেওয়া যাক, যেগুলো মোটা হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করে থাকে।
মোটা হওয়ার খাবারের তালিকা
১. কিসমিস
কিসমিস অনেকের প্রিয় একটি খাবার। ওজন বাড়ানো বা মোটা হওয়ার ক্ষেত্রে কিসমিস বেশ উপযোগী। অল্প পরিমাণ কিসমিসে অনেক পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেল থেকে। তাই নাস্তার আইটেম বা দুপুর/রাতে খাবারের পর কিছুটা কিসমিস খাওয়া যেতে পারে।
২. বাদাম
বাদাম আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে বা মোটা হওয়ার ক্ষেত্রে এটি আপনার অত্যন্ত কাছের একজন সাথী হতে পারে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের বাদাম আপনি ক্ষেত্রে পারেন, চিনা বাদাম, কাজু বাদাম ইত্যাদি যেটি আপনার কাছে পছন্দ হয়। প্রতিদিন কিছুটা বাদাম খেতে পারেন।
৩. মধু
অন্যান্য সব খাবারের ন্যায় মধুও আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী একটি উপাদান। আর তাই ওজন বৃদ্ধি করতে হলে আজ থেকে প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে কিছুটা মধু খেয়ে নিতে পারেন।
৪. পিনাট বাটার
পিনাট বাটার হচ্ছে প্রচুর ক্যালরি যুক্ত একটি খাদ্য, যেটি আপনার ওজন বৃদ্ধিতে বা মোটা হতে বেশ সাহায্য করে থাকবে। আপনি চাইলে বিভিন্ন খাবারের সাথে পিনাট বাটার মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে মোটা হতে চাইলে অবশ্যই আজ থেকে নিজের খাদ্য তালিকায় পিনাট বাটার কে যুক্ত করুন।
৫. তাজা ফলমূল
তাজা ফলমূল আমাদের প্রত্যেকের জন্য উপকারী। বিভিন্ন ধরনের ফলমূল খেলে আপনি মোটা হওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা পাবেন এমনটা নয়, আপনাকে সুস্থ এবং সবল রাখার ক্ষেত্রে তাজা ফলমূল বেশ ভূমিকা রাখবে।
এসব খাবার গুলো আপনি যখন ইচ্ছে খেতে পারেন। সব খবর প্রত্যেকদিন গ্রহন করবেন এমনটা মোটেও নয়। বরং নিয়ম করে প্রতিদিন একটি একটি খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। এবং এই খাদ্যভাস আপনি কয়েক মাস নিয়মিত পালন করতে পারলে পরিবর্তন নিজে লক্ষ করতে করবেন।
তো এইবার চলুন খাবারের বাহিরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস জেনে নেওয়া যাক যা আমাদের মোটা হওয়ার ক্ষেত্রে বেশ সাহায্য করবে।
মোটা হওয়ার টিপস
১. নিয়মিত ব্যায়াম করা
অনেকে ভাবেন হয়তো ওজন কমাতে ব্যায়াম করতে গিয়ে থাকে। তবে এমনটা কিন্তু মোটেও নয়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা সবসময় পরামর্শ দেন মোটা হওয়ার ক্ষেত্রে দৈনিক কিছুটা ব্যায়াম করার। এক্ষেত্রে আপনি আপনার নিকটস্থ জিম ট্রেইনার কিংবা ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করা শুরু করতে পারেন। আপনার শরীরের অবস্থা দেখে আপনার উপযোগী ব্যায়াম এর ব্যাপারে তারা আপনাকে বলে দিবে।
২. বেশি বেশি খাবার খাওয়া
মোটা হওয়ার ক্ষেত্রে বেশি বেশি খাবার খাওয়ার বিকল্প নেই। যদি আপনি দ্রুত সময়ে মোটা হতে চান তবে উপরের খাবার গুলো আপনি বেশি বেশি করে খেতে থাকুন। এতে খুব দ্রুত পরিবর্তন লক্ষ করবেন।
৩. বেশি ক্যালোরি এবং প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়া
অনেকে আছে খাবার প্রচুর পরিমাণে খেলেও মোটা হয় না। মূলত আপনাদের খাবারে ক্যালরি এর পরিমাণ অনেকটা কম থাকে। আর তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এমন খাবার রাখা উচিত যেগুলোতে উচ্চমাত্রায় ক্যালরি এবং প্রোটিন রয়েছে।
৪. পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে
শরীরের সুস্থতায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো অত্যন্ত প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন এখন ব্যক্তির স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন ৬-৭ ঘণ্টা পরিমান ঘুমানো উচিত। এই সময়টাকে আপনি রাত এবং দুপুর দুই ভাবে ভাগ করে নিতে পারেন।
৫. চিন্তামুক্ত থাকতে হবে
ওভারথিংকিং বা অতিরিক্ত চিন্তা করাটা আমাদের শরীরের জন্য কোনোভাবে ভালো নয় বরং এটি আমাদের শরীরের সুস্থতায় ঋণাত্মক প্রভাব ফেলে। আর তাই যতটা সম্ভব চিন্তামুক্ত থাকবেন। মোটা হওয়ার ক্ষেত্রে এই বিষয়টিও লক্ষণীয়।
সর্বশেষ পরামর্শ
আর্টিকেলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আপনাদের যত ধরনের খাদ্যতালিকা বা টিপস দিয়েছি চেষ্টা করুন আজ থেকে সেগুলো একটি লিস্ট করে দে অনুযায়ী পালন করতে।
তাহলে আমি কথা দিতে পারি আপনি মোটা হওয়ার সমস্যা থেকে রেহায় পাবেন। এছাড়াও আপনি চাইলে আপনার নিকটস্থ কোনো ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী এসব খাদ্য খেতে করেন।
আজকের আর্টিকেলটা ছিল এই পর্যন্তই। এই বিষয়ে যদি আপনার কোনো প্রশ্ন কিংবা মতামত জানানোর থেকে থাকে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আল্লাহ হাফেজ!