স্ট্রেস কমানোর নিনজা টেকনিক

 

স্ট্রেস কমানোর নিনজা টেকনিক

মডার্ণ লাইফের সবচেয়ে বড় কয়েকটা প্রবলেমের একটা হল স্ট্রেস!!

এটাকে বাদ তো আমরা দিতে পারি না, বাট একে ম্যানেজ করার একটা টেকনিক নিয়ে আজকের এই পোষ্ট।

তো কথা হচ্ছে আমার কাজ ফিটনেস নিয়ে, আমি স্ট্রেস নিয়ে লিখতে বসলাম কেন?

উত্তর খুব সোজা।

স্ট্রেস আমাদের ফিটনেস রেজাল্টকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে।

স্ট্রেস আর ল্যাক অফ স্লিপ আমাদের শরীরকে এতোভাবে নেগেটিভলি এফেক্ট করে যে এই দুইটা নিয়ে আমার চিন্তা করতেই হয়।

এই নিয়ে অনেকেই অনেক লিখেছেন, অনেকেই অনেক জানেন, তাই এই সমস্যা নিয়ে আমার বেশি না বললেও চলবে।

তবে ফিটনেসের সাথে এর একটা সম্পর্ক না বললেই নয়।

এক্সারসাইজ নিজেও কিন্তু আমাদের শরীরে একটা স্ট্রেস। এক্সারসাইজ করে আমরা আমাদের শরীরে নির্দিষ্ট একটা ধরণের স্ট্রেস দেই। যেটার স্ট্রেস-রেসপন্স হলো বাড়তি মাসেল, কিংবা কমতি ফ্যাট কিংবা অন্য কোন ফিটনেস আউটপুট।

সব স্ট্রেসেরই একটা রেসপন্স থাকে, মানে আমাদের শরীর স্ট্রেসের মুখোমুখি হলে শরীর রিয়্যাক্ট করবে, ভালো কিংবা খারাপ।

সো সব স্ট্রেসই কিন্তু খারাপ না।

তো ঘটনা হল, আমরা স্ট্রেস বলতে আসলে যে গুলো বুঝি মেন্টাল স্ট্রেস, সে গুলো কিন্তু আসলে খারাপই। সে গুলো আমাদের শরীরে বিভিন্ন হরমোনাল চেইন্জ আনে যা আমাদের জন্য বেশিরভাগ সময়ই ভালো না।

সমস্যা হলো আমাদের শরীর কতটুকু স্ট্রেস নিতে পারে সেটা সীমাবদ্ধ।

ভালো স্ট্রেস আর খারাপ স্ট্রেসে আমাদের শরীর পার্থক্য করতে পারে না। একটা নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি স্ট্রেস আমাদের শরীর নিতে পারবে না।

তো ঘটনা হলো, আমরা এক্সারসাইজের মাধ্যমে আমাদের শরীরে স্ট্রেস দিচ্ছি, কেউ কেউ ডায়েটের মাধ্যমেও দিচ্ছি (সবাই না), এর পরে যদি লাইফের নরমাল স্ট্রেসও আরো বেড়ে যায় তো কি হবে বলেন তো?

ওভারট্রেইনিং হয়ে যাবে।

মানে আপনার বডি রিকভার করতে পারবে না।

মানে আপনারা মাসেল বিল্ডিং ব্যাহত হবে।

এর জন্য কি করতে হবে?

অবশ্যই স্ট্রেস-ম্যানেজমেন্টে কিছুটা হলেও গুরুত্ব দিতে হবে।

তো সেই স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের একটা নিনজা টেকনিক আজকে আপনাদের সাথে আমি শেয়ার করবো।

কি সেই নিনজা টেকনিক?

খুব সোজা, এক সাথে একটার বেশি কাজ করবেন না।

এ আবার কেমন টেকনিক হলো?

আসলে খুবই কাজের টেকনিক হলো। আর খুব পাওয়ারফুল টেকনিক হলো।

ব্যাখ্যা করছি।

ধরেন আপনি একজনের সাথে কথা বলছেন, কিংবা যে কোন একটা কাজ করছেন। এর মাঝে মাঝে মোবাইলে সোশ্যাল মিডীয়া চেক করছেন। একটা নোটিফিকেশন আসলে কিংবা একটা কেউ মেসেজ দিলে সেটার রিপ্লাই দিচ্ছেন।

এখন সমস্যা হয় কি, আমাদের ব্রেইন কখনোই এক সাথে দুইটা কাজ করতে পারে না।

আপনি হয়তো ভাবছেন, পারবে না কেনো? আমি তো প্রায়ই দুইটা কাজ এক সাথে করি।

হ্যাঁ, আপনি দুইটা কাজ একসাথে করেন, কিন্তু আপনার ব্রেন কিন্তু দুইটা কাজ একসাথে করে না।

সে একটা কাজে তার মনোযোগ দেয়, তারপর সেই কাজ থেকে মনোযোগ সরিয়ে আরেকটা কাজে দেয়, আবার মনোযোগ আগের কাজে ফেরত আনে।

এভাবে দুই কাজের মাঝে লাফালাফি করতে থাকে।

 ডায়েট কোক কতটা উপকারী 

ধরেন আপনি নদী পার হবেন। 

দুইটা নৌকা পাশাপাশি চলছে। দুইটাই নদী পার হবে। আপনি যে কোন একটায় উঠে বসে থাকলেই অপর পারে চলে যাবেন।

কিন্তু আপনি করছেন কি, একটা নৌকায় উঠে বসলেন।

৫ মিনিট পর মনে হল নাহ, ঐ নৌকাটা বুঝি ভালো।

আপনি তখন আপনার বোঁচকা-বুঁচকি নিয়ে কসরত করে লাফ মেরে পাশের নৌকায় চলে গেলেন।

৫ মিনিট পর মনে হল, আরে ধুর! আগের নৌকাটাই ভালো ছিল। আপনি আবার লাফঝাঁপ মেরে আগের নৌকায় ফেরত গেলেন।

এই রকম করে একটু পর পর আপনি এ নৌকা থেকে সেই নৌকা করতে থাকলেন। 

শেষ-মেষ আপনি অপর পাড়ে পৌছাবেন ঠিকই। কিন্তু অনেক বেশি ক্লান্ত হয়ে যাবেন।

আপনি হয়তো ভাবছেন, ভাই এই রকম কাজ কোন বেকুবে করে?

আনফরচুনেটনি, এই রকম কাজ আমরা সবাই করি।

খেতে খেতে ইউটিউব দেখি, অফিসের কাজ করতে করতে কারো মেসেজের উত্তর দেই, বড় বাথরুম করতে গিয়ে ফেসবুক টিপাই।

মোদ্দা কথা, আমরা আমাদের দিনের বড় একটা অংশ দুইটা কাজের মধ্যে এ রকম লাফালাফি করতে থাকি।

ফলাফল??

আমাদের ব্রেইনের অবস্থা হয় সেই নৌকার বেচারা লোকটার মত।

এটা কিন্তু আমাদের ব্রেইনের জন্য ট্রিমেন্ডাস একটা স্ট্রেসের কারণ।

দেখেন, আমাদের লাইফে অনেক রকম সমস্যা হয়, সেই সব সমস্যার কারণে বিভিন্ন রকম স্ট্রেসের মুখোমুখি আমরা হই। সেই সব তো আর পাশ কাটিয়ে যাওয়া যায় না। তবে এই এক সাথে একাধিক কাজ করার স্ট্রেস কিন্তু আমাদের নিজের দ্বারা আরোপিত স্ট্রেস। আমরা চাইলে এটা কমাতে পারি।

সো কি করতে হবে?

একসাথে দুইটা কাজ করবেন না।

কাজ করতে করতে কলিগের সাথে কথা বলবেন না।

কথা বলতে হলে হাতের কাজ বন্ধ রাখুন, কথা বলুন, কথা শেষ করুন। শেষ করে ৩টা বড় দম নিন, আবার হাতের কাজ শুরু করুন।

উপরের লাইনটা আবার পড়ুন।

দুইটা কাজের মাঝখানে পারলে ৩ টা বড় দম নিন, জাস্ট একটু নিজের ব্রেইনকে রিলাক্স হওয়ার সুযোগ দিন।

একটা কাজ শেষ হল, এখন আরেকটা কাজ করবেন। মাঝে ৩টা বড় দম নিন।

অনেক্ক্ষণ হয়ে গেল, মোবাইল টিপাচ্ছেন না।

আচ্ছা ঠিক আছে, হাতের কাজটা রাখুন, ৩টা বড় দম নিন, তারপর মোবাইল টিপান। টিপানো শেষ হলে আবার ৩ টা বড় দম নিন। আগের কাজে ফেরত যান, বা অন্য কোন কাজে মনোনিবেশ করুন।

সারাদিন মোবাইলের ইন্টারনেট চালু রাখার দরকার নেই। যখন মোবাইল হাতে নিবেন তখন চালু করুন। না হলে টুং-টাং চলতেই থাকবে।

এক কাজ করতে গিয়ে আরেক কাজের চিন্তা করবেন না।

এটাকে বলা হয় বিয়িং প্রেসেন্ট ইন দ্য মোমেন্ট, যে কাজ করছেন সেটাকেই পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে করা।

স্ট্রেংথ আর এথলেটিক্সের ফিল্ডে এটাকে বলা হয় বিয়িং ইন দ্য জোন। এক্সারসাইজ বা কোন মুভমেন্ট পারফর্ম করার সময় সম্পূর্ণ মনোযোগ সেই দিকেই দেয়া।

কথা হল, এই জিনিসটা ধুপধাপ করে তো আর একদিনে হয়ে যাবে না এর জন্য প্র্যাকটিস লাগবে।

এর প্র্যাকটিস করতে আসলে খুব কষ্ট যে কথা লাগে তা না। তবে শুরুতে শুরুতে একটু খেয়াল রাখা লাগে, এই যা।

আস্তে আস্তে জিনিসটা প্র্যাকটিস হয়ে যায়।

শেষ কথা,

তো এই ছিল আমার নিনজা টেকনিক স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট করার। এটা ঠিক মতো প্র্যাকটিস করতে পারলে বেশিরভাগ মানুষের স্ট্রেস লেভেল অন্তত অর্ধেক কমে যাবে।


ওহহ…আরেকটা কথা তো বলাই হয় নি। এই টেকনিকের আরেকটা সুবিধা হল, স্ট্রেস কমানোর সাথে সাথে এটা কিন্তু আপনার কাজেও আপনাকে আগের চেয়ে বেশি প্রোডাক্টিভ করে তুলবে। কেননা আপনি ফুল ফোকাস দিয়ে এখন একটাই কাজ করছেন। আগের মত লাফাচ্ছেন না।


সো আর দেরি কেনো? আপনি এই নিনজা টেকনিক এপ্লাই করা শুরু করে দিন, ইট ক্যান একচুয়ালি চেইঞ্জ ইয়োর লাইফ এক্সপেরিয়েন্স।


আশাকরি টেকনিক গুলি দারুন কাজ দেবে।


এই পোস্ট টি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। 

2 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম