কিটো ডায়েট কি? জেনে নিন

 

কিটো ডায়েট কি? জেনে নিন

সুস্থ এবং ফিট শরীর আমরা সকলেই চাই। কিন্তু আমাদের অনেকেরই এটা হয়ে ওঠা হয় না। অনিয়ন্ত্রিত জীবন অভ্যাস এবং বাজে খাদ্যাভ্যাস এর ফলে আমাদের অনেকের শরীরে চর্বি জমে অনেকটা মোটা হয়ে যায়।শরীর ফিট করে তোলার জন্য যে ব্যায়াম এর প্রয়োজন অনেকেই দামের ক্ষেত্রে অনীহা দেখিয়ে থাকে।তাই আমরা অনেকেই এমন কোন খাদ্যদ্রব্যের কথা ভাবি যেটা খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীর কিছু না করেই যদি ফিট রাখা যেত। যারা এরকমভাবে থাকেন তাদের জন্য সমাধানের নাম হচ্ছে কিটো ডায়েট।

কিটো ডায়েটের রয়েছে কার্যকারী নানা ধরনের গুণ। আর এই কারণে অনেকে একে মূল্যবান মনে করেন। আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদেরকে কিটো ডায়েট কি এবং কিটো ডায়েট খাবার তালিকা সম্পর্কিত বিষয় সমূহগুলি সম্পর্কে বলবো।তাহলে চলুন দেরী না করে শুরু করা যাকঃ-

কিটো ডায়েট কি?

কিটো ডায়েট হচ্ছে এক ধরনের ডায়েট চার্ট যার মাধ্যমে স্বল্প সময়ে এবং স্বল্প অনুসরণ করে শুধুমাত্র খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে ওজন কমানো যায়। সাধারণত আমরা নরমাল যে ডায়েট করে থাকি তাতে ৫০ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট, ৩০ শতাংশ ভ্যাট এবং ২০ শতাংশ প্রোটিন থেকে থাকে।কিন্তু কিটো ডায়েটে কার্বোহাইড্রেট থাকে ৫ শতাংশ, প্রোটিন থাকে ২৫ শতাংশ আর ফ্যাট থাকে ৭০ শতাংশ।তাহলে আপনারা অবশ্যই এতক্ষণে কিটো ডায়েট কি বা কিটো ডায়েট এর সংজ্ঞা সম্পর্কে জেনে গিয়েছেন।

কিটো ডায়েট খাবার তালিকা(যেসব খাবার খাবেন)

কিটো ডায়েট সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়ার জন্য কিটো ডায়েটে যেসব খাবার খাবেন সেগুলো সম্পর্কে ধারণা নেওয়া জরুরী।আপনারা চাইলে কিটো ডায়েট খাবার তালিকার মধ্যে এই খাবারগুলো খেতে পারেন। শাকসবজি খেতে পারেন এবং এর সাথে সামুদ্রিক মাছ এবং মুরগি রাখতে পারেন। দেশি মুরগি হলে সব থেকে ভালো হয়। তাছাড়া আপনার আরো খেতে পারেন টক জাতীয় ফল, খাসি বা গরুর পা, ঘি বাটার, বাদাম এবং চা-কফি রাখতে পারেন তাও চিনি ছাড়া।

কিটো ডায়েট খাবার তালিকা(যেসব খাবার খাবেন না) 

কিটো ডায়েট চলাকালীন চিনি, মিষ্টি জাতীয় খাবার এবং ফলের জুস ও ডাল জাতীয় খাবার, মাটির নিচে হয় এমন খাবার আলু,মিষ্টি আলু, আটার তৈরি খাবার, ভাত, পাস্তা, নুডুলস এই সকল খাবারগুলো খাওয়া যাবেনা। 

কিটো ডায়েট চার্ট 

সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর ৮ টার দিকে এক কাপ চিনি ছাড়া চা খেয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনারা চায়ের সাথে আদা এবং লবঙ্গ যোগ করে খেতে পারেন। দুপুরের খাওয়া শুরু করার আগে অবশ্যই লেবু পানি অথবা আপেল ভিনেগার খেয়ে নিতে হবে।এটা খাওয়ার ফলে বাড়তি মেদ খুব শীঘ্রই ঝরে যাবে। তারপরে মাছ মাংস এবং সবুজ শাকসবজি খেতে পারেন তবে এক্ষেত্রে মাংস খেলে অবশ্যই ১ পিচ এর কম খেতে হবে।

আপনারা এই টাইমে ঘি দিয়ে ভাজা বাদাম খেতে পারেন। তার সাথে সালাদ থাকলে খুবই ভালো হয়।যারা কিটো ডায়েট করে থাকেন তারা চাইলে দিনে ৬ টি পর্যন্ত ডিম খেতে পারেন। তাই এই সময়ে  ডিম খেতে পারেন।ডিম শরীরকে প্রোটিন জুগিয়ে তুলতে সাহায্য করে।

 ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা 

যদি বিকালে ক্ষুধা লেগে থাকে তাহলে সকালের যে ধরনের খাবার খেলে ওই ধরনের খাবার বিকালে খেতে পারেন।রাতের খাবার সাধারনত দুপুরেই যে রকম খাবার খাবেন সেরকম খেতে পারেন। তবে বাড়তি ক্যালরি যুক্ত কোন খাবার ভুল করেও রাতে খাওয়া যাবেনা।রাত আটটার আগে রাতের খাবার খাওয়া শেষ করে ফেলতে হবে এবং তারপর যত ক্ষুধায় লাগুক পানি ছাড়া কিছু খাওয়া যাবেনা। 

কিটো ডায়েটে কি কি ফল খাওয়া যাবে

যারা কিটো ডায়েট করে থাকেন তাদের অনেকের এই প্রশ্নটা তার থাকে যে কিটো ডায়েটে ফল খাওয়া যাবে কিনা।কিটো ডায়েটে অবশ্যই ফল খাওয়া যাবে তবে সব ধরনের ফল কিটো ডায়েটে খাওয়া যাবেনা। অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় ফল আপনারা কিটো ডায়েটে খাবেন না।চাইলে টক জাতীয় কিছু ফল কিটো ডায়েট চলাকালীন সময়ে খেতে পারেন।যারা ফল খেতে চান তারা জলপাই, এভোকোডা, স্ট্রবেরি এবং লেবু রাখতে পারেন খাদ্যতালিকায়। 

কিটো ডায়েটে কি কি সবজি খাওয়া যাবে

হ্যাঁ অবশ্যই কিটো ডায়েটে সবজি খাওয়া যাবে। কিটো ডায়েট চলাকালীন সময়ে আপনি বেশি পরিমাণে সবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কিটো ডায়েট চলাকালীন সময়ে যেকোন লাল শাক সবজি, পালংশাক, ব্রোকলি,বাঁধাকপি ফুলকপি, লাউ এই ধরনের সবজি গুলো খেতে পারেন। 

কিটো ডায়েট রেসিপি

কিটো ডায়েট যারা করেন তাদের খাবারের দিকে তো অনেকটা বাড়তি সচেতন হতে হয়।অর্থাৎ কিটো ডায়েট এর মাধ্যমে আপনাকে ভালো কিছু রেজাল্ট নিয়ে আসতে হলে অবশ্যই কিটো ডায়েট রেসিপি টা মেনটেইন করতে হবে। তাই কিটো ডায়েটে যেসব খাবার ব্যবহার করবেন সেগুলো অবশ্যই হতে হবে ঘি এবং বাটারে ভাজা। তাছাড়া আপনারা এই ক্ষেত্রে রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন এক্সট্রা ভার্জিন অয়েল তেল। 

কিটো ডায়েট কতদিন করা যায় 

যারা কিটো ডায়েট করে থাকেন তাদের মধ্যে অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন যে কিটো ডায়েট কতদিন করা যায় সেই সম্পর্কে।কিটো ডায়েট সাধারণত এক সপ্তাহ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত করা হয়ে থাকে।আর কিটো ডায়েট চলাকালীন এই সময়ে অবশ্যই খাবারের প্রতি বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে এবং নিজের শরীরের দিকেও নিয়মিত খেয়াল রাখতে হবে।

কিটো ডায়েট কি ক্ষতিকর

কিটো ডায়েট কি এর সম্পর্কে হয়তো মোটামুটি ধারণা পেয়ে গিয়েছেন।আপনাদেরকে এবার জানতে হবে কিটো ডায়েট কি ক্ষতিকর না ভালো শরীরের জন্য সেটা সম্পর্কে।কিটো ডায়েট এর সময় সাধারণত অধিক চর্বিযুক্ত খাবার এবং অধিক প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া হয়ে থাকে।যার ফলে ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা দেখা দিতে পারে।তাছাড়া কিডনিতে পাথর এবং কিডনির অন্যান্য সমস্যা, পিত্তথলিতে পাথর, থাইরয়েডের সমস্যা, হজম শক্তি কমে যায় এবং চুল পড়ে যাওয়া এই রকম নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।

তাই যদি সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন তাহলে কোনোভাবেই কিটো ডায়েটে যাবেন না।কেননা শরীরের সাথে জোর করে যদি কোন কিছু মানিয়ে নিতে চান তাহলে সেখানে শরীরের ক্ষতি বেশি হবে লাভ তেমন বেশী হবেনা। 

আমাদের শেষ কথা, 

আশা করি আজকের এই পোস্ট টি পড়ার মাধ্যমে কিটো ডায়েট কি এবং কিটো ডায়েট খাবার তালিকা সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়ে গিয়েছেন।তাছাড়া আরও জানতে পেরেছেন কিটো ডায়েট খাবারের চার্ট এবং কিটো ডায়েট কিভাবে করতে হয় সেই সম্পর্কে।তার পরেও কোনো বিষয় সম্পর্কে যদি বুঝতে কোনো ধরনের অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে আমাদেরকে সরাসরি কমেন্ট করে জানিয়ে দিতে পারেন।আর যদি আমাদের আজকের এই পোস্ট টি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে শেয়ার করে অন্যদের দেখার সুযোগ করে দিতে পারেন। ধন্যবাদ। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম