ডায়েট কোক কতটা উপকারী

 

ডায়েট কোক কতটা উপকারী

ডায়েট কোকের স্বাস্থ্য উপকারিতা 

ক্ষতিকর সফট ড্রিংসগুলোর ভিড়ে আমরা বেশির ভাগ সময়ই মনে করে থাকি ডায়েট কোক নামে বাজারে যে পানীয় পাওয়া যায় তা আমাদের শরীরের জন্য নিরাপদ। শুধুমাত্র নিরাপদ বলে মনে করার কারনেই বহু মানুষ দিনের পর দিন পান করে যাচ্ছেন ডায়েট কোক।ওবেসিটি থেকে বাঁচতে কোক জাতীয় সফট ড্রিংস ছেড়ে ডায়েট কোক পান বর্তমান সময়ে আমাদের এক প্রকার ফ্যাশনও বলা যায়। এছাড়াও আমাদের মধ্যে একটি ধারণা থাকে ,আমরা সাধারণ যে কোমল পনীয় পান করি তার থেকে ডায়েট কোকে ক্যালরির পরিমান কম। আর ডায়েট কোক শরীরের জন্য সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যকর।কিন্তু এমন ধারণার কি আদ্য কোন যৌক্তিকতা আছে?  কিংবা আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন ডায়েট কোক পানও আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে?   

Diet Coke/ Coca-cola light মূলত কোকাকোলা দ্বারা উৎপাদিত চিনিমুক্ত এবং স্বল্প-ক্যালরিযুক্ত কোমল পানীয়। এতে চিনির পরিবর্তে কৃত্রিম মিষ্টিকারক ব্যবহার করা হয়।ডায়েট কোকাকোলাকে (Diet coca-cola)  সর্বপ্রথম Diet Rite নামে বাজারে আনা হয়।প্রথমে ডায়েট কোক 'কে বাজারে আনা হয়েছিল ডায়াবেটিস এর রোগী  এবং যারা কম পরিমান ক্যালরি গ্রহণ করতে ইচ্ছুক তাদের কথা চিন্তা করে। যুক্তরাজ্যের, একটি ৩৩০ মিলি কোকাকোলা থেকে পাওয়া যায় ১৪২ কিলোক্যালরি আর একটি ৩৩০ মিলি ডায়েট কোক থেকে পাওয়া যায় ১.৩ কিলোক্যালরি।

ডায়েট কোক 'এ  ক্যালরির পরিমান কম বলে,বাজারে প্রাপ্ত অন্যান্য পানীয় থেকে আপনি একে স্বাস্থ্যকর বলে মনে করছেন। কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছেন, সফট ড্রিংস সেটা ডায়েট কোক হোক বা অন্য কোন পানীয়; সব ড্রিংকসের মধ্যেই কিন্তু রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। এছাড়াও সফট ড্রিংসে কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করা হয়,যা আপনার শরীরের জন্য কখনো কখনো ক্ষতিকারকও হতে পারে ।অতএব, আপনি যখন ডায়েট কোক'কে আপনার খাদ্য তালিকার মধ্যে যুক্ত করছেন তার আগে আপনার উচিত এর উপাদান সম্পর্কে একটু বিস্তারিত  জানা, 

ডায়েট কোক খাওয়ার সময় কোকের বডিতে থাকা লেভেলএ এতে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপাদানের নাম দেখেই থাকবেন।আসুন আজ আমরা এই ডায়েট কোকে ব্যবহৃত উপাদানগুলো সম্পর্কে একটু বিস্তারিত জানি,

ডায়েট কোকের প্রধান দুইটি উপাদান হলো carbonated water এবং সাধারণ পানি। এই দুইটি উপাদানকে অবশ্য অন্যান্য সকল কোমল পানীয় তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়।  

1️⃣ ক্যারামেল কালার ( Caramel colour) :

খাবারকে রঙিন করার জন্য সর্বাধিক ব্যবহৃত পদার্থ হলো ক্যারামেল কালার। caramel colour মূলত corn এবং cane suger কে তাপ দিয়ে তৈরি করা হয়। আর এর সাথে আরো কার্বোহাইড্রেট জাতীয় উপাদান মিশিয়ে পছন্দসই রঙে আনা হয়। 4-methylimidazole হলো ক্যারামেল ক্যালারের প্রাথমিক পদার্থ যা ফুসফুস ক্যান্সার সৃষ্টির সাথে সর্ম্পকৃত।

 কিটো ডায়েট কি? জেনে নিন

2️⃣ অ্যাস্পার্টাম ( Aspartame) :

অ্যাস্পার্টাম হলো লো-ক্যালরি যুক্ত কৃত্রিম মিষ্টিকারক যা aspartic acid  এবং phenylalanine এর সংমিশ্রণে তৈরি। কিছু কিছু গবেষণায় এই উপাদানটিকে গর্ভবতী মহিলা, শিশু এমনকি সকলের জন্য নিরাপদ বলে দেখানো হয়েছে। আবার কিছু কিছু গবেষণায় এই aspartame কে  প্রাণীদেহে ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধিকারক হিসেবেও দেখানো হয়েছে। এছাড়াও স্বল্প ক্যালরিযুক্ত এই মিষ্টিকারক পদার্থ গুলো শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে পারে।

3️⃣ ফসফরিক এসিড ( Phosphoric acid) :

ডায়েট কোক সহ অন্যান্য কোমল পানীয়তে ফসফরিক এসিড একটি সাধারণ উপাদান। খাদ্য শিল্পে ফসফরিক এসিড সাধারণত খাবারে তীক্ষ্ণ স্বাদ যুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।ফসফরিক এসিড গ্রহণে  দাঁতের এনামেল ক্ষয়প্রাপ্ত হতে পারে, এছাড়া মূত্রাথলীর সমস্যা এবং কিডনির সমস্যাও দেখা দিতে পারে।  

4️⃣ Natural Flavors

ডায়েট কোকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক স্বাদ যেমন,ফল - শাকসবজি,বিভিন্ন হার্ব থেকে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক নির্যাস ও ব্যবহার করা হয়। তবে প্রাকৃতিক এইসব স্বাদের পরিবর্তে বিভিন্ন কৃত্রিম ক্যামিকেলও ব্যাবহার করা হয়ে থাকতে পারে।ডায়েট কোক বিভিন্ন ধরনের রয়েছে যেমন,raspberry, caffeine free,lemon,lime, diet coke plus ইত্যাদি।

5️⃣ পটাশিয়াম সাইট্রেট (Potassium citrate):

পটাশিয়াম আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। কোমল পানীয়তে টার্টের স্বাদ কমাতে,ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য বাফারিং এজেন্ট হিসেবে পটাশিয়াম সাইট্রেট ব্যবহার করা হয়। পটাশিয়াম সাইট্রেট, খনিজ  পটাশিয়াম এবং সাইট্রেট্র এর সংমিশ্রণে তৈরি উপাদান। 

6️⃣ সাইট্রিক অ্যাসিড ( Citric Acid) :

 সাইট্রাস থেকে প্রাপ্ত টক স্বাদের জন্য দায়ী উপাদানের নাম সাইট্রিক অ্যাসিড।আসলে কোক'কে দীর্ঘদিন পর্যন্ত সতেজ রাখার জন্য এই উপাদানটি ব্যবহার করা হয়। অতএব,বুঝতেই পারছেন এই পদার্থটি ডায়েট কোককে খারাপ হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। প্রিজারভেটিভ হিসাবে সাইট্রিক অ্যাসিড কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা আমরা অনেকেই জানি।এছাড়াও সাইট্রিক এসিড আমাদের শরীরের  কিটোসিস প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।  

7️⃣ ক্যাফিন (Caffeine):

 ক্যাফিন হলো সর্বকালের দীর্ঘ-বিতর্কিত রাসায়নিক। ক্যাফিনের নেতিবাচক প্রভাব যেমন আসক্তি, অনিদ্রা এবং বিরক্তিকরতা সম্পর্কে মানুষ অনেকটাই সচেতন।এছাড়াও এই রাসায়নিক উপাদানটি  আপনাকে আরও ভাল বোধ করতেও সহায়তা করে। কিন্তু , ডায়েট কোকে ক্যাফিন আসলে ফ্যাট পোড়াতে সহায়তা করে।এটি থার্মোজিনেসিস নামক একটি প্রক্রিয়া দ্বারা শরীরকে উদ্দীপিত করে এবং  ক্যালোরিকে শক্তিতে  রূপান্তরিত করে। 

8️⃣ Carbonated Water:

Carbonated Water এর রাসায়নিক সংকেত হলো H2CO3। এটি কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস মিশ্রিত পানি  । ডায়েট কোকে  94 শতাংশ পর্যন্ত কার্বনেটেড ওয়াটার থাকে।আর এর জন্যই মূলত ডায়েট কোকে ছোট ছোট বুদবুদের সৃষ্টি হয়। 

9️⃣ এসেসালফাম কে বা এসিসেলফাম পটাসিয়াম ( Acesulfame K or Acesulfame Potassium ):

এটি হলো নন-ক্যালরিযুক্ত কৃত্রিম  সুগার যা একাধারে দীর্ঘদিন গ্রহণে cognitive damage এর মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই পদার্থটিকে বিভিন্ন খাদ্যে মিষ্টিকারক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি chewing gum, ice cream, jam এবং বিভিন্ন  frozen dessert এ মিষ্টিকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।Acesulfame potassium কেও বিভিন্ন খাবারে ব্যবহার করা হয়। আর কিছু গবেষণায় দেখা যায়, এই Acesulfame potassium ক্যারসিনোজেন হিসেবে কাজ করে breast এবং lung cancer এর মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

উপসংহারঃ

বাস্তবে, ডায়েট সোডাগুলি কতটা স্বাস্থ্যকর তা বোঝার সহজতম উপায় হলো এদের রঙ এর দিকে নজর দেওয়া।পরিষ্কার/ হালকা রঙের ডায়েট সোডা গুলো গাঢ় রঙের ডায়েট সোডা থেকে স্বাস্থ্যকর।এছাড়া অনেকেই ভেবে থাকেন ডায়েট এ আছি,ডায়েট কোক পান করি আমার ডায়েট এর জন্য সহায়ক হবে ।আপনিও যদি এমনটি ভেবে থাকেন,,  তাহলে আপনি ভুল!! কারন,ডায়েট কোক কোনভাবেই আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে না।

পোস্ট টি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম