ইনসুলিন রেজিট্যান্স কি? ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কেন হয়

 

ইনসুলিন রেজিট্যান্স কি? ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কেন হয়

ইনসুলিন হরমোন কি তা না বুঝলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ব্যাপারটা আসলে বোঝা যাবে না।

ইনসুলিন হচ্ছে আমাদের দেহের অন্যতম প্রধান এনাবোলিক হরমোন(গ্রোথ হরমোন ও থাইরয়েড হরমোনের পরেই মূলত মানুষের বৃদ্ধিতে এর ভুমিকা)। পরিনত মানুষের দেহে(পরিনত বলতে এখানে আমরা ১৯ বছরের বেশি বয়সী মানুষকে বুঝবো) ইনসুলিনই প্রধান এনাবোলিক হরমোন।

এনাবোলিজম আর ক্যাটাবোলজিম কি একটু বুঝাই। এনাবোলিজম হচ্ছে আমাদের শরীরে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিকনিকা-গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, এমাইনো এসিড ও ফ্যাটি এসিডস থেকে শরীর যে শরীর গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট মলিকিউলগুলি তৈরি করে, সেই প্রক্রিয়া। মানে এটা হচ্ছে মেটাবোলিজমের সেই অংশ যাকে আমরা শরীর গড়া, বৃদ্ধি ও ক্ষয়পুরনের প্রক্রিয়া বলি।

আর ক্যাটাবোলিজম হল এনাবোলিজমের উলটা। এখানে শরীর তার মধ্যস্থ বড় মলিকিউলগুলোকে ভেঙ্গে আরো ছোট মলিকিউলে রুপ দেয়। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাটকে ভেঙ্গে এমাইনো এসিডস, ফ্যাটি এসিডস, গ্লুকোজ ইত্যাদি তৈরি করে। 

তো ক্যাটাবোলিজম আর এনাবোলিজম দুটো ব্যাপারই কিন্তু আমাদের শরীরের হরমোনাল একশনের ওপর ডিপেন্ড করে। ওজন বাড়ানো আর কমানোর যত কেরামতি দেখানো হয় এর পুরোটাই আসলে নির্ভর করে এই হরমোনের সাথে স্পেসিফিক ফুড এন্ড ড্রাগস এবং এদের নিজেদের ভেতরকার পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝার ওপরে।

হরমোনগুলো ব্লাডে, অরগ্যানে ও টিস্যুতে থাকে এবং এদের উপস্থিতির ওপরে নির্ভর করে, শরীর কি নিজেকে ভাঙ্গবে না গড়বে। এই ক্যাটাবোলিজম-এনাবোলিজম মিলেই মূলত আমাদের শরীরের ভাঙ্গা গড়ার খেলা, যাকে সবাই বলে মেটাবোলিজম।

ব্লাড, অরগ্যান ও টিস্যুতে ক্যাটাবোলিক হরমোন বেশি থাকা মানে, শরীর নিজেকে ভাঙ্গবে; এনাবোলিক হরমোন বেশি থাকা মানে, শরীর নিজেকে গড়বে। এই প্রক্রিয়াকে ৩টা জায়গা থেকে ইনফ্লুয়েন্স করা হয়।

১)ব্রেইনঃ মাস্টার অফ অল মেটাবলিজম। আমাদের যত ওয়েট লস-গেইন বা গ্রোথ হয়, সবকিছু মূলত কন্ট্রোল্ড হয় ব্রেইন থেকে। 

২)ওভারি-ইউটেরাস/টেস্টিসঃ সেকেন্ডারি গ্রোথের মাস্টার হচ্ছে মূলত আমাদের রিপ্রোডাক্টিভ হরমোন রিলিজ করে যেই অরগ্যানগুলো, তারা। বিশেষভাবে পরিনত বয়সে আমাদের কতটা মাসলস/বোন্স ডেভেলপমেন্ট হবে আর শরীরে কোথায় কোথায় ফ্যাট ডিস্ট্রিবিউশন কেমন হবে তা অনেকটাই এই অঙ্গগুলির ওপর নির্ভরশীল। গাটকে অনেকে সেকেন্ড ব্রেইন বলে। আমি ওভারি-টেস্টিসকে বলি থার্ড ব্রেইন।

৩)গাট-এড্রেনাল-থাইরয়েডসঃ ১ এবং ২ এর মাঝখানে একটা হিউজ ভ্যাকিউয়াম আছে, এই ভ্যাকিউয়ামটাকে রীতিমত ডমিনেট করে গাট-এড্রেনাল গ্ল্যান্ডস এবং থাইরয়েড গ্ল্যান্ডস। এদের কাজ হচ্ছে ওপরের দুটো অংশের কার্যক্রমকে যথাসম্ভব দুর্বোধ্য করে তোলা, মানে মিডিয়েট করা, প্রভাবিত করা।

হাড় ক্ষয়ের কারণ ও হাড় ক্ষয় প্রতিরোধে করণীয়

এখন আশা করি আপনারা ইনসুলিনের ব্যাপারটা বুঝবেন, ইনসুলিন হচ্ছে আমাদের দেহের অন্যতম প্রধান এনাবোলিক হরমোন। মানে এটা আমাদের শরীরকে বড়সড় হয়ে উঠতে সহায়তা করে।

কিভাবে??

ইনসুলিন আমাদের যে ৩ রকম ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট মলিকিউল আছে, কার্ব, প্রোটিন ও ফ্যাট,  তাদেরকে বডিতে ইউটিলাইজ ও স্টোর করতে সাহায্য করে। ব্লাডে ইনসুলিন লেভেল হাই থাকা মানে লিভার নিজে থেকে কোন গ্লুকোজ তৈরি করবে না, বরঞ্চ সে গ্লুকোজ ভেঙ্গে গ্লাইকোজেন বানাবে, প্রয়োজনে ফ্যাট বানাবে। বডিতে এনার্জি খরচ করার জন্য যে মেকানিজম, অসংখ্য এনাবোলিক এমাইনো এসিডস বেড়ে গিয়ে সেটাকে স্লো করে দেবে, ফলে মেটাবলিজম হয়ে যাবে স্লো। মাইটোকন্ড্রিয়াগুলি শক্তি খরচ করা কমিয়ে দেবে।

এখন ইনসুলিন নিয়ে কোন আলাপ উঠলেই আমরা চিন্তা করি প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয় নিয়ে। কিন্তু সেটা হচ্ছে ইনসুলিনের জন্মস্থান, তার অফিস না। ইনসুলিন যে অফিসে কাজ করে তার নাম হচ্ছে লিভার। আর এই লিভার হচ্ছে আমাদের শরীরের সবচে বড় ল্যাবরেটরি+গোডাউনও। এছাড়াও ইনসুলিনের আছে অনেকগুলো চেইন অফিস। এই চেইন অফিসের মধ্যে প্রধান হচ্ছে আমাদের বড় বড় ভোলান্টারি মাসলস আর বড়সড় হাড়গুলো। এদের মধ্যেও প্রচুর ইনসুলিন রিসেপ্টরস থাকে।

তো ইনসুলিনের প্রধান কাজ হল (প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে) এনার্জি প্রোডাকশন করা এবং এনার্জিকে স্টোরেজ ফর্মে নিয়ে যাওয়া, অ্যাজ সিম্পল অ্যাজ দ্যাট।

আর ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হচ্ছে একটা শারীরবৃত্তীয় অবস্থা যেখানে আপনার শরীরের কোষগুলোতে ইনসুলিন হরমোনের প্রবেশ বা ক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। ইনসুলিন চায় আপনার ব্লাড-টিস্যু থেকে গ্লুকোজ নিয়ে লিভারে গ্লাইকোজেন বা ফ্যাট আকারে স্টোর করতে। কিন্তু লিভারে যদি আগে থেকেই তার ক্যাপাসিটির সর্বোচ্চ পরিমান গ্লাইকোজেন (১০০ গ্রামের কাছাকাছি) থাকে তাহলে শরীর এই এক্সট্রা গ্লাইকোজেন পাঠায় মাসলে। মাসলের টোটাল গ্লাইকোজেন স্টোরিং ক্যাপাসিটি প্রায় ৫০০ গ্রামের মত।

এরপর, শরীরের কোষগুলো যখন গ্লাইকোজেনে টইটম্বুর, তখন আমাদের শরীরের কোষগুলো ইনসুলিনকে রিফিউজ করতে থাকে। 

ধরেন কুরবানীর ঈদের পর আপনার ফ্রিজার গোশতে ভরপুর, এক ফোটা জায়গা নেই, এমনকি বাসায় হাড়ি পাতিলও নেই গোশত রাখার, এখন কেউ যদি আরো দশ কেজি গোশত রাখতে বলে, আপনি কি করবেন??

ফিরিয়ে দেবেন।

শরীর এই কাজটাই করে। ইনসুলিনকে ফিরিয়ে দেয়। রিসেপ্টর এক্টিভিটি কমে যায়।

এই অবস্থায় যখন মানুষ আবার খায়, তখন রক্তে ইনসুলিন লেভেল আবার বাড়ে। হায়ার কনসেন্ট্রেশনের ইনসুলিন তখন এই লো রিসেপ্টর এক্টিভিটিতেও কোষের ভেতর ঢুকে পড়ে।

এই ঢুকে পড়াটা কোষের জন্য ভাল না, কারন সে স্যাচুরেটেড।

তখন কোষ ইনসুলিনের প্রবেশের সুযোগ আরো কমায়।

এই অবস্থা কেই ইনসুলিন রেজিট্যান্স বলা হয়।

নিউট্রিশনিস্ট সজল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম