রমজানে সাহরি ও ইফতারির স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকা

 

রমজানে সাহরি ও ইফতারির স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকা

রমজানে সাহরি ও ইফতার হওয়া উচিত স্বাস্থ্যকর। কেননা পুরো একটি মাস রোজা রাখতে সুস্থ সবল থাকা দরকার। অসুস্থতা ও অপুষ্টি নিয়ে রোজা রাখলে কষ্ট হয়, রোজায় পরিপূর্ণ তৃপ্তি পাওয়া যায় না। শুদ্ধ নিয়তের সাথে সবগুলো রোজা রাখার জন্য রমজানে সাহরি ও ইফতারের খাবার স্বাস্থ্যকর হওয়া প্রয়োজন। জেনে নিন আসন্ন রমজানে সাহরি ও ইফতারের স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকা কীভাবে তৈরি করবেন, কী কী খাবেন, কী কী খাবেন না এসব বিষয়ে। 

রমজানে সাহরি ও ইফতারের স্বাস্থ্যকর খাবার সমুহ

ত্যাগ ও সংযমের মাস রমজান। সুবহে সাদিকের সময় সাহরি খাওয়ার পর সারাদিন না খেয়ে থাকতে হয়। দিনশেষে মাগরিবের সময় ইফতারের খাবার খেয়ে রোজা ছাড়তে হয়। ১২-১৩ ঘণ্টা এমনকি কোনো কোনো অঞ্চলে আরও বেশি সময় না খেয়ে রোজা পালন করতে হয়। এই লম্বা সময় না খেয়ে থাকায় শরীর অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবণা থাকে। অসুস্থ হতে না চাইলে রমজানে সাহরি ও ইফতারের খাবার হতে হবে স্বাস্থ্য সম্মত ও পুষ্টিকর। তা না হলে সারাদিনের পুষ্টি উপাদান গুলোর অভাবে শরীর হয়ে যাবে নিস্তেজ। বাকি রোজা গুলো রাখা হয়ে যাবে কষ্টকর। 

তাই রমজানে সাহরি ও ইফতার করুন স্বাস্থ্যকর ভাবে।

রমজানে সাহরি তে খাবার তালিকায় যা রাখবেন :

রোজার শুরু হয় সাহরি খাওয়ার মাধ্যমে। সাহরি খাওয়া যেমন বরকতময়, তেমনি এই বেলার খাবারই আপনাকে সারাদিন শক্তি জোগায়। তাই সাহরিতে ভারী খাবার খেতে হবে। অবশ্যই তা স্বাস্থ্যকর হতে হবে। 

সাহরির খাবার

শর্করা আমাদের দেহের শক্তি জোগান দেয়। ভাত, রুটি এসব খাবার উচ্চ মাত্রার শর্করা ও ক্যালরিযুক্ত। সাহরিতে মোট খাবারের ৫০ ভাগ রাখুন শর্করা অর্থাৎ ভাত অথবা রুটি। সাহরিতে ভাত, তরকারিই খেয়ে থাকে আমাদের দেশের মানুষ। তাই এটা নির্দিষ্ট করে না বললেও হয়। ভাতের সাথে রাখুন প্রোটিন ও ফাইবার যুক্ত খাবার। 

প্রোটিন ও ফাইবার আপনার ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। নিয়মিত ফাইবার যুক্ত খাবার যেমন- শাকসবজি খেলে আপনার হজমশক্তি ভালো থাকবে। সেই সাথে ক্ষুধার অনুভূতি কম হবে। প্রোটিনও তা-ই করে। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার মূল খাবার বলা হয় প্রোটিনকে। প্রোটিন যুক্ত খাবার আপনার সারাদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় ভূমিকা রাখবে। ফলে রোজা রেখে আপনি দ্রুত ক্লান্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়বেন না।

বিভিন্ন রকমের রঙিন শাকসবজি খান সাহরিতে। শাকসবজি ফাইবারের সবচেয়ে ভালো উৎস। বিভিন্ন ফলমূলও খেতে পারেন। কলা খেলে ক্ষুধা কমে যায়। কলা, আপেল, খেজুর এই ফলগুলো সাহরিতে খাওয়ার চেষ্টা করুন।

 প্রোটিন পেতে মাছ, মাংস খান। মাছের অথবা মাংসের তরকারি দিয়ে ভাত খান। ডিম একটি সহজলভ্য প্রোটিন। ডিম ও ডিমের তরকারি রাখুন খাবার তালিকায়। সিদ্ধ ডিম খেতে পারেন। 

খান দুধ। কারণ দুধ পেটের জন্য ভালো এবং সেই সাথে প্রোটিনের উৎস। দুধ খেলে সারাদিন ক্ষুধার কষ্ট কম অনুভূত হবে।

 রমজানে ডায়াবেটিস কিভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন?

খাবার শেষে পেট ঠাণ্ডা রাখতে খেতে পারেন দই। রোজায় পেটের সমস্যা  ও পানিশূন্যতার হাত থেকে দূরে থাকতে দই খান।

খাবার থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি পেতে সীমিত পরিমাণে খান। একদম পেট ভরে খেলে শরীর দূর্বল হয়ে যেতে পারে। 

যা খাবেন না:

- সাহরিতে ডাল খাবেন না। ডাল খেলে পেটে গোলযোগ দেখা দিতে পারে। 

- যাদের রক্তচাপের সমস্যা আছে তারা লাল মাংস অর্থাৎ গরু ও মহিষের মাংস না খাওয়ার চেষ্টা করবেন।

- চা, কফি পান করবেন না এসময়। কারণ এসব পানীয় সারাদিন আপনাকে পানিশূন্যতা, পিপাসায় ভোগাবে।

ইফতারের খাবার 

দিনশেষে রোজা ছাড়তে হয় মাগরিবের সময়। আজান দিলে প্রথমে তরল খাবার দিয়ে রোজা ছাড়লে সবচেয়ে ভালো। অর্থাৎ পানি, দুধ, ডাবের পানি, লেবুর শরবত দিয়ে। সারাদিনের ক্ষুধা ও পিপাসার কষ্ট এক নিমিষে বিদায় করতে এক গ্লাস পানিই যথেষ্ট। 

রোজা ছাড়ার সময় তরলের পাশাপাশি বিভিন্ন ফলমূল খেলে বেশি ভালো। খেজুর হলো ইফতারের নিয়মিত খাবার। খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নাত। খেজুর, আম, কলা, আপেল, কমলা, অ্যাভোকাডো এসব ফল আপনার সারাদিনের পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে অধিক উপকারী। 

পানি, ফলমূল দিয়ে রোজা ছেড়ে ১০ মিনিট পর অন্য খাবার খেলে ভালো হয়। কারণ একসাথেই সব খাবার খেলে দূর্বল হয়ে পড়তে পারেন।

ফলমূল, পানীয়ের পর ইফতারে খেতে পারেন ছোলা, বুট, সালাদ, শাকসবজি, খিচুড়ি, পায়েস, দই-চিড়া, মুড়িমাখার মতো হালকা খাবারগুলো।

সুযোগ পেয়েই বেশি খেয়ে ফেলবেন না। তাহলে সমস্যা হবে আপনারই। সুস্থ থাকতে খেতে হবে সীমিত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর খাবার। 

যা খাবেন না :

সারাদিন পেট খালি থাকে। খালি পেটে অতিরিক্ত মশলাদার, ভাজাপোড়া, চিনিযুক্ত খাবার খেলে পেটে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবণা বেশি। পিঁয়াজু, বেগুনি, জিলাপির মতো হরেক রকম মশলাদার ও চিনিযুক্ত খাবারের লোভ অনেকেই সামলাতে পারে না। তাই বেশি করে এই খাবারগুলো খাওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কিন্তু এটা মোটেই স্বাস্থ্যকর হবে না।

শরবত, ফলের রস, ফলের জুস খাওয়ার সময় যতটা সম্ভব চিনি ছাড়া খাবেন। চিনি ছাড়া শরবত খাওয়ার চেষ্টা করুন। লেবুর রস, আপেলের জুস খান।

শেষ কথা,

পুরো রমজান মাসে যদি সুস্থ শরীর ও মনোবল নিয়ে রোজা রাখার নিয়ত করেন, তাহলে অবশ্যই রমজানে সাহরি ও ইফতারের স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকা বজায় রাখুন। লোভে পড়ে বেশি খেতে যাবেন না, তাতে ক্ষতি আপনারই হবে। সংযমের মাসে খাবারের বেলায়ও সংযম রাখতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম