মহিলাদের সৌন্দর্য দ্রুত নষ্ট হওয়ার কারণ ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স

 

মহিলাদের সৌন্দর্য দ্রুত নষ্ট হওয়ার কারণ ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স

আমাদের বৃদ্ধ হওয়ার যে প্রক্রিয়া, তাকে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুন দ্রুত করে দেয় ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। 

মেয়েদের সৌন্দর্য অকালে নষ্ট হবারও অন্যতম বড় কারন ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স

 এটা থেকে অনেকের ক্ষেত্রে কমে যায় মেয়েলি হরমোন এস্ট্রোজেন, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে এটা এস্ট্রোজেন লেভেলকে স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়িয়েও তোলে। রোগীর হোয়াইট ফ্যাট সেল ডিপোজিট বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে এরোমাটেজ এক্টিভিটি, সেই সাথে বাড়ে কোষ থেকে উৎপন্ন হওয়া এস্ট্রোন, এস্ট্রোজেন ও এস্ট্রোল।

এখন, এগুলো বাড়ার ফলাফল কি?? ফলাফল হচ্ছেঃ

১)ব্রেস্ট-হিপ-এবডোমেন ও থাইয়ে অস্বাভাবিক চর্বি সঞ্চয়

২)অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা, বিষণ্ণতা, নার্ভাসনেস

৩)১৬-৪৫ বছর বয়সী নারীদের মেনোপজাল নারীদের মত আচরন

৪)নন প্রেগন্যান্ট নারীদের মধ্যে প্রেগন্যান্ট নারীদের মত আচরন

৫)ফাইব্রয়েডস-এডিনোমায়োসিস

৬)পিসিওএস অথবা এন্ডোমেট্রিওসিস

৭)ওভারি ও ইউটেরাস বড় হয়ে যাওয়া

৮)ব্রেস্ট ক্যান্সার, ওভারিয়ান ক্যান্সার

এই সবগুলো সমস্যার গোড়া ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, তবে, আগের পোস্টে উল্লেখ করা আছে যে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স থেকে বিপরীত ঘটনাও ঘটতে পারে। আবার ঠিক একই ঘটনা ঘটতে পারে হাইপোথাইরয়েডিজম থেকেও।

আসলে যত সরল করে লিখছি বিষয়টা কখনোই এতোটা সরল না। একেকটা মেটাবলিক পাথওয়ে মুখস্ত করা একেকটা বিভীষিকার মত। কার ক্ষেত্রে কি হবা এটা বলা প্রায় অসম্ভব, কারন জিনেটিক্স এবং হরমোনাল রিসেপ্টর, যেগুলো হরমোনকে রিসিভ করে সেগুলোর সংখ্যা ও কার্যকারিতা, এবং নিউট্রিশনাল স্টেইটাস।

ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের ফলে আমাদের লিভার সারাক্ষন যে চর্বি তৈরি করতে থাকে, সেগুলো ধীরে ধীরে আমাদের পুরো মেটাবলিজমকেই বদলে দেয়। এটা মূলত শরীরের একটা সেলফ ডিফেন্স মেকানিজম।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস কতটা বিপদজনক?

প্রথমে, এরা লেপটিন তৈরি বাড়িয়ে ক্ষুধাকে নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করে। কিন্তু আমাদের ব্রেইন হাই লেভেল ইনসুলিনের উপস্থিতিতে লেপটিনের বিরুদ্ধেও রেজিস্ট্যান্স জেনারেট করে ফেলে, যেন আমরা আরো বেশি খেতে পারি।

ব্যস, ক্ষুধার ওপর কন্ট্রোলের বারোটা বাজে। ছোট ছোট মেয়ে যাদের অত্যন্ত অল্প বয়সে ব্রেস্ট ডেভেলপ করে, তাদের ক্ষেত্রে এই লক্ষনটা কমন। দুটোর কারন একই, এক্সট্রা ইনসুলিন থেকে লেপটিন রেজিস্ট্যান্স-এস্ট্রোজেন ডমিন্যান্স।

দ্বিতীয়ত, ব্রেইন এই বাড়তি ফ্যাটগুলোকে প্যাথোজেন(ক্ষতিকর জীবানু) হিসেবে শনাক্ত করে এদের সংখ্যা কমানোর জন্য ইমিউন সেল বা রোগ প্রতিরোধী কোষের পরিমান বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এই সেলগুলোর থিক প্রটেক্টিভ লেয়ার এগুলোকে কোন এক অজানা উপায়ে রক্ষা করে এবং ইমিউন সেলগুলো  তখন রক্তে ঘুরে বেড়ায় বা অন্য টিস্যুতে আক্রমন করে।

ফলে শরীরে শুরু হয় ক্রনিক ইনফ্ল্যামেশান।

তৃতীয়ত, বাড়তি ফ্যাট সেল আমাদের রক্তে থাকা অক্সিজেনও ব্যবহার করে, যদিও অল্প পরিমানে। কিন্তু এই সেলের সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে গেলে অল্প অল্প করে নেয়া অক্সিজেনের পরিমানই অনেক হয়ে দাঁড়ায়। আমরা তখন ক্রনিক লো গ্রেড অক্সিডেটিভ স্ট্রেসে ভোগা শুরু করি, মানে দীর্ঘমেয়াদী স্বল্পমাত্রার কোষীয় পর্যায়ে অক্সিজেনের স্বল্পতা। এই পরিস্থিতিতে শরীর দেয় ম্যাক্রোফাজ প্রোডাকশন বাড়িয়ে।

ম্যাক্রোফাজ আপনার ব্লাডে থাকা এলডিএল ও ট্রাইগ্লিসারাইডসকে সুন্দর করে জমিয়ে জমিয়ে ফোম সেল বানায় আর আপনার ধমনীর গায়ে জমিয়ে দেয়, ফলে স্ট্রোক-হার্ট ডিজিজের রিস্ক বাড়তে থাকে।

এখন, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স জিনিসটা আরেকটা সমস্যা তৈরি করে, যা খুব একটা আলোচিত নয়।

ওভারিয়ান এইজিং।

ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের ফলে হার্ট মাসলে ব্লাড সাপ্লাই যেমন করে বাধাগ্রস্ত, একইভাবে ওভারিতেও ব্লাড ফ্লো বাধাগ্রস্ত হয়।

আর ব্লাড ফ্লো কমা মানেই অক্সিজেন ফ্লো কমা। যেকোন কোষের মৃত্যু হচ্ছে কোন না কোন উপায়ে অক্সিজেন সরবরাহ বা ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাওয়া। 

সেই সাথে, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স আমাদের মাইটোকন্ড্রিয়াল আউটপুট কমিয়ে দেয় ফলে আমাদের কোষগুলো যথেষ্ট এনার্জি তৈরি করতে ব্যর্থ হয়।

এর সাথে যখন এস্ট্রোন ও এস্ট্রায়োলের বাড়তি উপস্থিতি যোগ হয়, তখন রোগীর বায়োলজিক্যাল ওভারিয়ান এইজিং দ্রুত বাড়তে থাকে।

এর অবশ্যম্ভাবী ফল হচ্ছে, AMH লেভেল কমে যাওয়া, যদিও মেটাবলিক পাথওয়েটা ঠিক কি তা এখনো স্পষ্ট না।

কিন্তু এটা স্পষ্ট, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স আপনার সমস্ত রিপ্রোডাক্টিভ হরমোনকে এলোমেলো করে দিতে সক্ষম এবং অনুর্বরতার প্রধান কারন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

comment url