লবণ বেশি খেলে কি হয় জেনে নিন

 

লবণ বেশি খেলে কি হয় জেনে নিন

লবন বেশি খেলে প্রেসার বাড়বে এমন কথা অনেকেই বলে থাকেন।

লবন বলতে এক্ষেত্রে সোডিয়ামকে বুঝানো হয়।

কিন্তু বছরভর আমাদের জনসংখ্যার একটা বিরাট অংশ লো প্রেসারে ভুগে থাকেন। বিশ্বাস না হলে মেয়েদের জিজ্ঞেস করে দেখেন, লো প্রেসার অনেকেরই নিত্যসঙ্গী।

আমাদের অনেকেরই মেজাজ খিটখিটে থাকে ঘেমে যাওয়ার পর। এই খিটখিটে মেজাজ মূলত লবনের ঘাটতির জন্য হয়। গরমের দিনে স্ট্যামিনা কমে যায় শুধু গরমের জন্যই নয়, লবন বেরিয়ে যাওয়ার জন্যেও। 

শরীর থেকে অতিরিক্ত লবন বেরিয়ে গেলে হার্ট মাসল ঠিকভাবে সংকুচিত হতে পারে না ফলে আমরা হার্ট বিট মিস করতে পারি, এখান থেকে এমনকি হার্ট এটাকও হতে পারে এক্সট্রিম কেইসে।

আমাদের চারপাশে যত হাই ব্লাড প্রেসার দেখেন এর পেছনে লবনের চেয়ে চিনি, ধুমপান, ক্রনিক স্ট্রেস এবং ট্রান্স ফ্যাট অনেক বেশি দায়ী। বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষেরই গাদা গাদা প্রসেসড ফুড খাওয়ার মত টাকা নেই যে তারা বাড়তি সোডিয়াম খেয়ে হাই ব্লাড প্রেসারে মারা পড়বে।

কিন্তু, যারা অনেক বেশি বাইরের খাবার খান, আনুমানিক প্রতিদিন এক বা দুইবেলা, তাদের বাড়তি লবন খাওয়া ও তা থেকে হাইপারটেনশনে ভোগার সম্ভাবনা থাকে, তবুও আমি বলবো এখানে লবনই সব সমস্যার গোড়া না। খেয়াল করে দেখবেন এই লোকগুলিই স্মোক বেশি করে, বেশি স্ট্রেসে থাকে, সুগার বেশি খায়।

সুগার বেশি খেলে আপনি আবার অটোম্যাটিক সল্ট ক্রেইভিংয়ে ভুগবেন। কারন সুগার উচ্চ ঘনত্বে আপনার কিডনিতে পৌছালে কিডনি সোডিয়াম-পটাসিয়াম-ক্যালসিয়াম-ম্যাগনেসিয়াম শোষন করা কমিয়ে দিয়ে সেগুলি শরীর থেকে বের করে দিতে শুরু করে।

এইজন্য যারা সুগারওয়ালা খাবার খান, তাদেরকে প্রায়ই দেখা যায় বাড়তি লবন দেয়া ফ্যাটযুক্ত খাবারের খোজ করতে। সেই ফ্যাটের সাথেও থাকে আরো সুগার। ফলে লবন শরীরে থাকে না, আপনার আবার ক্ষুধা লাগে আবার খেতে হয়। এটা হচ্ছে ফুড ইন্ডাস্ট্রির দুষ্টচক্র।

আবার, সোডিয়াম যাদের কম, স্বাভাবিকভাবেই তাদের শরীরে ক্যালসিয়াম কম থাকবে, তেমনি, পটাসিয়াম যাদের কম তাদের শরীরে ম্যাগনেসিয়াম কম থাকবে।

তাই আমাদের ক্যালসিয়াম ডেফিসিয়েন্সি ইস্যুর পেছনে সোডিয়াম ডেফিসিয়েন্সিও লুকিয়ে আছে কিনা এই চিন্তাটা রোগী দেখার সময় করা দরকার। যদি ভুল না করে থাকি, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই কথাটা প্রথমবারের মত আমিই বললাম।

এখন এজন্য শুধু ইচ্ছামত লবন বা সোডিয়াম খেলেই সমস্যা দূর হবে বিষয়টা তা নয়। আমার আগের লবন বিষয়ক পোস্টে বলেছি, সোডিয়ামঃপটাসিয়াম রেশিও থাকবে ১ঃ২ থেকে ১ঃ৪।

কিডনি ডিজিজ না থাকলে সোডিয়াম ২৩০০-৬০০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত খাওয়া যায়। যার স্ট্রেস ও ফিজিক্যাল এক্টিভিটি যত বেশি সে লবন খাবে তত বেশি।

সোডিয়ামের দ্বিগুন থেকে চারগুন পরিমান পটাসিয়াম খেতে হবে প্রতিদিন। এটার সবচেয়ে ভাল উৎস শাকসবজি।

সোডিয়াম-পটাসিয়াম রান্না করলে হাওয়া হয়ে উড়ে যায় বটে কিন্তু তার পরিমান খুব বেশি না। এক্ষেত্রে রান্নায় ভাল তেল(সরিষা/তিল/তিসি/অলিভ/কোকোনাট) ব্যবহার করলে কুকিং লস কম হয়।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, চারটা কাজে লবন দরকার।

১)মাসল টোন, এনার্জি এন্ড স্ট্যামিনা

২)ব্লাড প্রেসার মেইনটেন্যান্স

৩)ক্ষুধা নিয়ন্ত্রন

৪)মেজাজ স্বাভাবিক রাখা

৫)স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট

নিউট্রিশনিস্ট সজল।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম