মানুষের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে চোখ একটি। চোখ দিয়ে সকল জীব এই দুনিয়ার আলো দেখে। আগেরকার যুগের তুলনায় বর্তমান এই আধুনিক যুগে মানুষের চোখের সমস্যার হার বেড়ে চলেছে। এর পেছনে কারণ হলো অন্ধকারে ডিজিটাল ডিভাইসের অতিরিক্ত ব্যবহার, পুষ্টিকর ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার না খাওয়া, নিয়মিত চোখের যত্ন না নেয়া। কঠিন কিছু না, সহজপ্রাপ্য কিছু খাবার রয়েছে যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করার কাজ করে। সেই খাবারগুলো খাওয়ার মাধ্যমে চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়।
এই ব্লগে চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করার খাবার ও কোন কাজগুলো করা উচিত আর কোনগুলো করা উচিত না, সে সম্পর্কে বলা হয়েছে।
চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করার খাবার
গুরুত্বপূর্ণ এই ইন্দ্রিয়টি মানুষের কিছু ভুলের কারণে দৃষ্টিশক্তি জনিত সমস্যায় পড়ে। চোখের দৃষ্টিশক্তি বিষয়ক একটি পরিচিত সমস্যা হচ্ছে মায়োপিয়া। চশমা ও লেন্স ব্যবহার করার মাধ্যমে চোখের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়। পাশাপাশি কিছু খাবার রয়েছে যা প্রতিদিন খেলে দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটানো সম্ভব।
চোখের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানগুলো হলো - ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই, প্রোটিন, ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড, লুটিন, বিটা ক্যারোটিন, ফাইবার, জিংক।
চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে এমন খাবারগুলো
ভিটামিন-এ
প্রায় সকল মানুষই এটা বলে ছোট মাছ চোখের জ্যোতি বাড়ায়। কচুর লতি, কচুরমুখী চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। আসলেই তা-ই। এই খাবারগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ। ভিটামিন-এ রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করতে অনেক কার্যকর। টমেটো, গাজর, জলপাই, কামরাঙা, মিষ্টি আলু, ডিম, রঙিন শাকসবজি যেমন- লালশাক, ব্রকলি এগুলোতে ভিটামিন-এ পাওয়া যায়।
ভিটামিন-সি
মানবদেহের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় ভিটামিন। সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উন্নতির পাশাপাশি এটি চোখের জন্যও উপকারী। চোখের পেশিগুলোকে সবল করতে ও দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে এই ভিটামিন কাজ করে। বিভিন্ন ফলফলাদি থেকে বেশিরভাগ ভিটামিন-সি পাওয়া যায়। পেয়ারা, জলপাই, কামরাঙা, জাম্বুরা, টমেটো, ব্রকলি, পালংশাক এ ভিটামিন-সি রয়েছে।
ভিটামিন-ই
শাকসবজি, বাদাম, মিষ্টি আলু, সূর্যমুখীর বীজ, অ্যাভোকাডো তে ভিটামিন-ই রয়েছে।
প্রোটিন
মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, বিভিন্ন ফলমূল থেকে প্রোটিন পাওয়া যায়।
ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড
বাদাম ও সামুদ্রিক মাছগুলোতে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায় বেশি। ওমেগা-থ্রি চোখে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে, চোখকে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করতে, ব্রেইনের উন্নতিতে এই খাদ্য উপাদান খুব কার্যকর।
লুটিন
সবুজ শাকসবজি, ডিমে লুটিন পাওয়া যায়। চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে লুটিন অনেক কার্যকর।
বিটা ক্যারোটিন
ভিটামিন-এ যেসব খাদ্যে পাওয়া যায়, সেসব খাবারে বিটা ক্যারোটিনও থাকে।
ফাইবার
শাকসবজি, ফলমূল, মাংস, বীজজাতীয় খাবার যেমন- ডাল, মটরশুঁটি, শিম ইত্যাদিতে আঁশ বা ফাইবার ও মিনারেলস্ বিদ্যমান।
জিংক
গরুর মাংস, মুরগির মাংস, ডিম, দুধ, বাদাম, শুকনো বীজজাতীয় খাবার, ঝিনুক এসব খাবারে জিংক থাকে।
স্বাভাবিক খাবার তো খাবেনই নিয়মিত, পাশাপাশি এই খাবারগুলো প্রতিবেলায় পাতে রাখুন। অবশ্যই প্রতিদিন দেড় লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে কোন কাজগুলো করা উচিত
- ডিজিটাল ডিভাইস যেমন- মোবাইল, কম্পিউটার, ভিডিও গেমিং, টিভি ইত্যাদি ব্যবহার করায় সীমিত হওয়া উচিত। বিশেষ করে অন্ধকারে এসব ডিভাইস ব্যবহার যত কম করা যায় তত ভালো। সুরক্ষার জন্য ডিজিটাল ডিভাইস থেকে নির্গত হওয়া নীল আলোকরশ্মি যেন সরাসরি চোখে না আসে তার জন্য নীল আলো প্রতিরোধী গ্লাস ব্যবহার করুন।
- একটানা বই অথবা কোনো ডিভাইসের দিকে তাকিয়ে না থেকে প্রতি ২০ মিনিটে ২০ সেকেন্ডের জন্য হলেও বিরতি নিন, চোখের পলক ফেলুন।
- দিনের বেলা কমপক্ষে ৯০ মিনিট বাইরের প্রকৃতি দেখুন।
- প্রচণ্ড রোদে বাইরে বের হলে সানগ্লাস লাগিয়ে রাখুন।
- তামাক, নিকোটিন এর ধোঁয়া থেকে দূরে থাকুন।
- যাদের চোখে সমস্যা আছে তারা ১/২ বছরে একবার করে নিয়মিত চেক-আপ করাবেন। যাদের চোখে কোনো সমস্যা নেই তাদের উচিত হলো ৫ বছরে একবার হলেও চোখ পরীক্ষা করা।
শেষকথা
চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করার খাবার গুলো নিয়মিত খান। চোখে কোনো সমস্যা দেখা গেলে অবহেলা না করে চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখিয়ে নিন।